অস্থিরতার প্রভাব শেয়ারবাজারে

ডিসেম্বর ১৯ ২০২২, ১২:০৮

অনলাইন ডেস্ক : দীর্ঘদিন স্থিতিশীলতার পর হঠাৎ করে দেশের রাজনীতিতে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। এর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও (মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ডলার, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট) চতুর্মুখী চাপে রয়েছে। ফলে এসবের চাপ দেশের শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিক অঙ্গনের এই পরিস্থিতি সংকটময় অর্থনীতিকে আরও সংকটে ফেলবে বলেও আশঙ্কা তাদের। অর্থনীতিতে রাজনীতির উত্তাপের আঁচ লাগতে দেয়া উচিত হবে না। আর সহসাই সংকট কেটে যাবে-এমন লক্ষণও নেই। বাজার বিশ্লষণে দেখা গেছে, দীর্ঘদন পর আবারো টানা দরপতন দেখা দিয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। সেইসঙ্গে ফিরে এসেছে লেনদেনের খরা। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবক’টি মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেন কমে আবারো তিনশ’ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে।

এর আগে নানান ইস্যুতে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন ও লেনদেন খরা দেখা দেয়। এ ছাড়া গত ১০ই ডিসেম্বরের পর বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আবারো টানা দরপতনের ধারায় চলে এসেছে শেয়ারবাজার। তবে গত সপ্তাহের প্রথম ৩ কার্যদিবস টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়।

 

এতে দরপতন কাটিয়ে শেয়ারবাজারে স্বপ্ন দেখতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের সেই স্বপ্ন আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। গত সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে দরপতন হয়। আর চলতি সপ্তাহের শুরুও হলো দরপতন দিয়েই। গতকাল মূল্যসূচক ও লেনদেন কমার পাশাপাশি দুই বাজারেই যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে তারচেয়ে বেশি। অবশ্য দাম বাড়া বা কমার তুলনায় দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আগের মতোই, বেশি রয়েছে। দাম অপরিবর্তিত থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে রয়েছে। ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ক্রেতার দেখা তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরুর ৪ মিনিটের মাথায় ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক বেড়ে যায় ২ পয়েন্ট। অবশ্য এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ১০ মিনিটের লেনদেন শেষ হতেই বদলে যায় বাজারের চিত্র। এরপর লেনদেনের সময় যত গড়িয়েছে, সূচক তত নিচের দিকে নেমেছে। সেইসঙ্গে বড় হয়েছে দরপতনের তালিকা। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৩০ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৫টির।

আর ২২১টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসই-এক্স আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৪৫ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২০৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরীয়াহ্‌ আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৪০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪২৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৮৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ৩ কার্যদিবস পর ডিএসইতে আবার লেনদেন তিনশ’ কোটি টাকার ঘরে নামলো। টাকার অঙ্কে বাজারটিতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ২২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুন্নু সিরামিকের লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার। ১৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বসুন্ধরা পেপার। এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- অ্যাপেক্স ফুডস্‌, জেনেক্স ইনফোসিস, মুন্নু এগ্রো, জেমিনি সি ফুড, ওরিয়ন ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন এবং অ্যাডভেন্ট ফার্মা। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ১২১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৫টির এবং ৫৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ড অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে। সংঘাত হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নষ্ট করে। এতে বর্তমানে যে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ধরে রাখা কঠিন। এজন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সমঝোতার মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া উচিত।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও