বর্জ্য ব্যাবস্থাপনায় মারাত্মক পরিবেশ সংকটে বরিশাল নগরবাসী
অক্টোবর ৩১ ২০২২, ১৫:৫৭
প্রায় ৬০ বর্গ কিলোমিটার বরিশাল মহানগরীর কম বেশী ৪৫ হাজার আবাসিক, অনাবাসিক ও বানিজ্যিক হোল্ডিং থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩শ টনেরও বেশী বর্জ্য এ নগরীর রাস্তাঘাটে জমা হচ্ছে। তবে এ নগরীতে এখন আর কোন ডাষ্টবীনের অস্তিত্ব নেই। এমনকি গোটা মহনগরীতে সেকেন্ডোরী ডাষ্টবিন আছে মাত্র দুটি। ফলে বিভিন্ন বাসাবাড়ীর লোকজন নগরীর রাস্তার ধারে উন্মুক্তস্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখছে। এমনকি নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা দুপুর থেকে সন্ধা পর্যন্ত নগরীর কিছু বাড়ীঘর থেকে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে রাস্তাঘাটের নির্দিষ্টস্থানে ফেলে রাখার পরে সেখান থেকে সিটি করপোরেশনের গার্বেজ ট্রাকগুলো এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে কাউনিয়া এলাকার ময়লাখোলা বা গার্বেজ স্টেশনে নিয়ে তা অপাসারন করছে।
কিন্তু একদিকে সে গার্বেজ স্টেশন যেমন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মত নয়, অপরদিকে বছরের পর বছর ধরে সেখানে এনগরীর জঞ্জাল জমা করতে গিয়ে এখন আর তা সম্ভবও হচ্ছে না। ফলে খুব দ্রুত নতুন গার্বেজ স্টেশন চালু না করলে এনগরীতে বর্র্জ্য অপসারনের কোন জায়গা খুজে পাওয়া যাবে না। এমনকি এনগরীতে ভয়াবহ পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটার আশংকাও করছেন পরিবেশবীদ সহ পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।
এসব বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ডাঃ রবিউল-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন মহলের উদ্বেগের বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে জানান, জঞ্জাল নিয়ে নগর ভবনও যথেষ্ঠ সচেতন। পুরেনা গার্বেজ ইয়ার্ডটির সর্বোচ্চ ব্যবহারের পাশাপাশি তা যতটা সম্ভব স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মতভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি নগরীর চরবাড়িয়া এলাকায় বর্জ্য অপসারনে নতুন ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এলক্ষে ৭ একর জমি হুকুম দখল সহ ভ’মি উন্নয়ন ও সীমানা প্রচীর নির্মানে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্ব চেয়ে মন্ত্রনালয়ে একটি ‘প্রকল্প-প্রস্তাবনা’ প্রেরন করা হয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে টাকা পেলে পরবর্তিতে এখানে অত্যাধুনিক একটি বর্জ্য অপসারন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথাও জানান তিনি।
তবে নতুন এ গার্বেজ স্টেশন স্থাপনে কত সময় লাগতে পারে সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে না পারলেও তহবিলের সংস্থানের ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সহ নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৯শ পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাজ সহ তার তত্বাবধান নিয়েও নগরবাসীর মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। অতি সম্প্রতি ঘূর্নিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে ৩৬ ঘন্টায় এ নগরীতে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পরে গোটা মহানগরী ৩ ফুট থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত পানির তলায় চলে যায়। এমনকি নগরীর পাশে প্রবাহমান কির্তনখোলা নদীর পানি বিপদ সীমার নিচে নেমে যাবার ৪৮ ঘন্টা পরেও জলাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি এ নগরী । নগরীর ১৬১ কিলোমিটার পাকা ড্রেনের বেশীলভাগেরই তিন-চত’র্থাংশ পর্যন্ত ভড়াট হয়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এসব ভড়াট ড্রেনগুলো বছরের পর বছর ধরে একই অবস্থায় থাকলেও পরিস্থিতির তেমন কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। নগরীর নবগ্রাম রোডের বটতলা বাজারের পশ্চিম থেকে হাতেম আলী কলেজ পর্যন্ত সড়কটি ঘন্টায় ৫ মিলি বৃষ্টিতেই প্লাবিত হচ্ছে। এমনকি সারা বছরই ঐ সড়কের পাশের ড্রেনটির পানি মূল সড়কে ছুয়ে থাকলেও তা থেকে উত্তরনের কোন পদকক্ষেপ নেই। আরো খারাপ অবস্থা নগরীর কাঁচা ড্রেনগুলোর।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে ভঙ্গুর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থারও উন্নয়ন না হলে এ মহানগরীর সুস্থ নাগরিক জীবন বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে বলেও শংকা প্রকাশ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবেশবীদগন।