রমজানে আমদানিমূল্য খতিয়ে দেখা হবে

ডিসেম্বর ২৯ ২০২২, ১১:০৮

ডেস্ক প্রতিবেদক: সাধারণত রমজানে পেঁয়াজ, খেজুর, ভোজ্য তেল, ছোলা, চিনি ও ডালের চাহিদা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়। এসব পণ্যের বেশিরভাগ আমদানি করা হয়। রমজানে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকার পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। কিন্তু সরকারের সুবিধা নিয়েও অনেকে অতিরিক্ত মুনাফা করতে আমদানিকৃত দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে থাকে। আগামী রমজানে আমদানির দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, রমজানে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রমজানে কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে বা সংকট তৈরি হলে ওই পণ্যের আমদানিকারকরা কী দামে আমদানি করেছে; আমদানিকারক সরাসরি পাইকারি বাজারে পণ্য বিক্রি করেছে নাকি পাইকারি বাজারে সরবরাহের জন্য অন্য ব্যবসায়ী কিনে নিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। আমদানিকারকের কাছ থেকে কেনার পর পাইকারি বা খুচরা বিক্রেতা দাম বাড়িয়েছে কি না তা মিলিয়ে দেখা হবে। দাম বাড়ালে দায়ী ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

ইতিমধ্যে জাতীয় বোর্ড (এনবিআর) থেকে পেঁয়াজ, খেজুর, ভোজ্য তেল, ছোলা, চিনি ও ডাল কোন কোন আমদানিকারক, কী পরিমাণে ও কত দামে আমদানি করতে যাচ্ছে বা করেছে তার হিসাব রাখা শুরু হয়েছে। ঈদুল আজহা পর্যন্ত এ তালিকার কাজ চলবে।

আমদানির দামের চেয়ে রমজানে বেশি দামে পণ্য বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এনবিআর সঠিক হিসেবে রাজস্ব পরিশোধের সব তথ্য খতিয়ে দেখবে। আমদানি-রপ্তানির তথ্যের বাইরেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আয়কর নথি ও ভেলু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) পরিশোধের তথ্য যাচাই করা হবে। তাদের আয়-ব্যয় ও সম্পদের হিসাব নেওয়া হবে। সম্পদ বাড়ার পরিমাণও দেখা হবে। অনিয়ম পাওয়া গেলে রাজস্ব আইন অনুযায়ী ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ^ব্যাপী করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ভয়াবহ ডলার সংকট চলছে। এসব কারণে দেশে-বিদেশে পণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রমজানে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী কোনো না কোনো অজুহাত দেখিয়ে কিছু পণ্য গোপনে মজুদ করে বাজারে পণ্য-সংকট তৈরি করে। সাধারণ মানুষ বেশি দামে পণ্য কিনতে গিয়ে কষ্টে পড়ে। এবার আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে পণ্যের দাম বাড়ানো হতে পারে এ আশঙ্কা থেকে রমজানের প্রায় তিন মাস আগে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।

এর আগে রমজানে পেঁয়াজ, চিনি, তেলসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিকৃত দামের চেয়ে বেশি দামে বেচে সাধারণ মাানুষকে কষ্টে ফেলা হয়েছে। তখন এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর পেঁয়াজ আমদানিকারকদের তালিকা ধরে এনবিআরে তলব করে। কত দামে এলসি খুলে আমদানি করা হয়েছিল, কী দামে পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করেছিল, আমদানিকারক সরাসরি পাইকারি বাজারে সরবরাহ করেছিল নাকি অন্য ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বিক্রি করেছিল সব তথ্য খতিয়ে দেখা হয়েছিল। এনবিআরের তৎপরতায় ওই রমজানে পেঁয়াজের দাম কিছু কমেছিল।

সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার সময়ে একবার রমজানে পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। আমদানিকারকদের এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে তলব করে আমদানি ও বিক্রয়মূল্য মিলিয়ে দেখা হয়। এর ফলে বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছু কমেছিল।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সাধারণত প্রতি মাসে খেজুরের চাহিদা থাকে পাঁচ-ছয় হাজার টন। কিন্তু রমজান মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন খেজুর লাগে। বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ টন; রমজানে চাহিদা আড়াই থেকে তিন লাখ টন। সারা বছর ১৮ লাখ টন চিনির চাহিদা থাকে; তিন লাখ টন লাগে রমজানে। সারা বছর গড়ে পাঁচ লাখ টন মসুর ডালের চাহিদা থাকে, রমজানে লাগে ৮০ হাজার টন। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার ৮০ শতাংশই লাগে রমজানে। বছরে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের পাঁচ লাখ টনই দরকার হয় রমজানে।

ইতিমধ্যে রমজান উপলক্ষে প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যবসায়ীদের কিছু সুবিধা দিয়েছে। এ সুবিধা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এ সুবিধার ফলে বাকিতে পণ্য আমদানি করা যাবে। ফলে আমদানিতে ডলারের প্রয়োজন হবে না। ব্যাংকগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে ঋণপত্র (এলসি) খুললে পণ্য দেশে আনা সম্ভব। তবে পরে আমদানি-দায় পরিশোধ করতে হবে।

গত ১১ ডিসেম্বর পণ্য আমদানির শর্ত সহজ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব পণ্যের ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে অগ্রিম জমা বা মার্জিন ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে বলা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রমজান মাসে পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ভোজ্য তেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুর আমদানির ঋণপত্র খোলায় নগদ মার্জিনের হার ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গে এক সভায় পণ্য আমদানিতে সুবিধা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকারকে সহযোগিতা করবে ব্যবসায়ীরা। কোনো আমদানিকারক কারসাজি করে পণ্যের দাম যাতে বাড়াতে না পারে সে জন্য আমাদের সংগঠন থেকেও নজরদারি করা হবে।’

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রমজানে বাড়তি চাহিদার সুযোগে ব্যবসায়ী নামধারী কিছু ব্যক্তি বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে। এদের অনেকেই আমদানিকারক; আবার অনেকে আমদানিকারকদের কাছ থেকে কিনে পণ্য বিক্রি করে। দাম স্বাভাবিক রাখতে এফবিসিসিআই কঠোর নজরদারি করবে। তবে দাম স্বাভাবিক রাখতে সৎ ব্যবসায়ীরা আন্তরিক থাকে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও