মেসিকে পরানো সেই রাজকীয় পোশাক তৈরি হয় বাংলাদেশে
ডিসেম্বর ২৪ ২০২২, ১৩:১২
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ফুটবল বিশ্বকাপে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় পর লিওনেল মেসিকে যে কালো পোশাকটি পরানো হয় তার নাম ‘বেস্ত’। যার অর্থ ‘আভিজাত্য’ বা ‘মর্যাদা’।
আরব বিশ্বের হাজার বছরের ঐতিহ্য ও রাজকীয় পোশাক এটি, যা আরব শেখেরা পরেন। কাতারের বেস্ত আল সায়েম কারখানায় তৈরি হয়েছে ফাইনাল ম্যাচ শেষে মেসিকে পরানো পিওর গোল্ড কলারের বেস্তটি।
তবে চমক লাগানো খবর এই যে, মেসিকে পরানো সেই বেস্তের মতো আরবীয় রাজকীয় পোশাকটি এখন তৈরি হয় বাংলাদেশে! বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের হাপুনিয়া গ্রামে রয়েছে এ পোশাক তৈরির কারখানা।
কারখানাটির নাম ‘বেস্ত আল নুর’। এখানে তৈরি হয় মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কাতার, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাহ, শেখদের পরিহিত রাজকীয় পোশাক বেস্ত ও আভায়া।
মানভেদে এখানের একেক বেস্তের দাম পড়ে ৩৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত।জানা যায়, প্রায় ১৩ বছর আগে বগুড়ার এরুলিয়ায় নিজ বাড়িতে ‘বেস্ত আল নূর’ কারখানাটি গড়েন নূর আলম নামের এক কাতার প্রবাসী।
এবার কাতার বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে চাহিদা বেড়েছে বেস্তের। সেই অনুযায়ী কারখানায় চাহিদা মাফিক বেস্ত তৈরিতে কাজ করেন কর্মীরা।
বিদেশি কাপড়ে হাতের কাজের নকশায় ‘বেস্ত’ তৈরি হয়। ‘বেস্ত আল নূর’ নামে কারখানায় এখন কাজ করছেন নারী-পুরুষ মিলে প্রায় ৩২ জন শ্রমিক। তারা সবাই এরুলিয়ার বাসিন্দা।
কারখানাটিতে কাঁচামাল হিসেবে কাপড় থেকে পূর্ণ একটি ‘বেস্ত’ তৈরি হতে ছয়টি ধাপ পার করতে হয়।
ধাপ গুলো হলো- বাতানা, হেলা, তোঘরোক, বুরুজ, মাসকারে, বরদাদ ও সিলালা। একেকটি পোশাক তৈরিতে সময় লাগে প্রায় ৭-৮ দিন। তারপর প্যাকেজিং করে ‘বেস্ত’ এর পূর্ণাঙ্গ রুপ হয়।
এখান থেকে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২ কোটি টাকার পোশাক বিক্রি করা হয়। সে হিসাবে অনুযায়ি প্রতি বছর গড়ে ২৪ কোটি টাকার পোশাক বিক্রি করা হয়। এই পোশাক অবশ্য বাংলাদেশে তেমন চাহিদা নেই। সবগুলোই যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।
‘বেস্ত আল নূর’ কারখানার দায়িত্বে রয়েছেন মো. মানিক। প্রায় ৫ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তিনি।
তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী আমাদের প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের বেস্ত তৈরি করা হয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত প্রায় ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন।
মধ্যপ্রাচ্যের শেখদের পোশাক কেন ও কীভাবে বাংলাদেশ তৈরির পরিকল্পনায় এলো সে কথা জানালেন ‘বেস্ত আল নূর’ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নূর আলম।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শ্রমিক হিসেবে প্রায় ২০ বছর আগে সৌদি আরবে যাই। সেখানে বিশেষ ধরনের এই পোশাক তৈরি কারখানায় কাজ শুরু করি। এক পর্যায়ে সব ধরনের ‘বেস্ত’ তৈরিতে দক্ষ হয়ে উঠি।
সৌদিতে থাকার কয়েক বছর কাতারে যাই। সেখানেও বেস্ত, আভায়া তৈরির কারখানায় কাজ পাই। পরে দেশে এসে প্রথমে ১০ জন শ্রমিক নিয়ে বেস্ত তৈরির কাজ শুরু করি।
নূর আলম জানান, কাতারে তার ‘বেস্ত’ বিক্রির শোরুম রয়েছে। এখন প্রায় সময়ই কাতার কিংবা সৌদি আরবে থাকেন। সৌদি আরবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা দোকানে তিনি বাংলাদেশে তৈরি ‘বেস্ত’ পাইকারি মূল্যে যোগান দেন।
বাংলাদেশ ছাড়াও বর্তমানে কাতারের দোহাতে তার এই ব্যবসা দেখাশোনা করছেন জামাতা রবিউল ইসলাম রনি।
নূর আলম বলেন, এই রাজকীয় পোশাকের সুতা, জরি আমদানি করা হয় জার্মান, দুবাই, সৌদিসহ কয়েকটি দেশ থেকে।
কারণ, এই মানের সুতা বাংলাদেশে নেই। তারপর বগুড়ার কর্মীদের হাতে নিখুঁত দক্ষতায় তৈরি করা হয় বেস্ত। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়।
তিনি জানান, এক সময় বাংলাদেশে তৈরি পোশাকে মেইড ইন বাংলাদেশ লিখা থাকতো না। এখন দিন পাল্টেছে। মেইড ইন বাংলাদেশের ঐতিহ্য বহন করছে বগুড়ার তৈরি এই বেস্তগুলো।
বেস্ত আল নুর প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশকে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক সম্মান ও সুনামে এগিয়ে নিচ্ছে বলে জানান নূর আলম।
ব্যবসায়ীদের পরামর্শ, বেস্ত তৈরির কাঁচামাল ও স্বর্ণের সুতা আমদানি ও পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অনেক রকমের ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয়। এগুলো সহজ করা গেলে বেস্ত প্রস্তুতকারকদের জন্য ভালো হবে।
সেসঙ্গে দেশের বেকার নারী-পুরুষদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই কাজ শেখানো গেলে তারাই সম্পদে পরিণত হবে।









































