দুর্গাপূজায় ৩২ হাজার মণ্ডপের প্রায় অর্ধেক ‘ঝুকিপূর্ণ’: আনসার মহাপরিচালক
অক্টোবর ০৬ ২০২৪, ১৪:০২
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: শারদীয় দুর্গাপূজায় ঝুঁকির বিবেচনায় প্রায় ১৫ হাজার পূজামণ্ডপকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ‘অধিক গুরুত্বপূর্ণ’ চিহ্নিত করে ‘বাড়তি নিরাপত্তা’ দেওয়ার কথা বলেছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী।
শনিবার বাহিনীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। তিনি অবশ্য উদ্বেগ থাকলেও আনন্দমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উৎসব উদযাপনে আশা প্রকাশ করছেন।
দুর্গাপূজা উপলক্ষ ৬ অক্টোবর হতে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৮ দিন সারা দেশের ৩২ হাজারের বেশি মণ্ডপে আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন থাকবে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
আনসার প্রধান জানান, ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ‘অধিক গুরুত্বপূর্ণ’ মণ্ডপে আনসার-ভিডিপি সদস্যরা মোতায়েন হবে রোববার, ‘সাধারণ’ কেন্দ্রগুলোতে তারা দায়িত্ব পালন করবেন দুই দিন পর থেকে।
সব মিলিয়ে মোতায়েন হবে ২ লাখ ১২ হাজার ১৯২ জন আনসার-ভিডিপি সদস্য। এর মধ্যে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে চিহ্নিত ১৫ হাজার ৩২ টি মণ্ডপে থাকবেন ৫৩ হাজার ১৪৮ জন।
আনসার প্রধান বলেন, “দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে করতে দেশের সকল বিভাগ- জেলা- উপজেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটি এবং সর্বস্তরের নাগরিক কমিটির সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সম্পন্ন হয়েছে।”
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার মধ্যে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। বিভিন্ন এলাকায় মণ্ডপে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের খবরও আসছে। পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সরকারের তরফেও সতর্ক করা হচ্ছে।
আনসারের আগে র্যাব ও বিজিবির পক্ষ থেকেও একই ধরনের বক্তব্য এসেছে। সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকেও স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েনের ঘোষণা এসেছে।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, “দুর্গাপূজায় কোনো ঝামেলা বা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার সম্ভাবনার কথা যদি বলি, অবশ্যই আছে।
“অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের কথা বলি, আনসার বাহিনীর মধ্যে কিছুটা বিদ্রোহের আশঙ্কা শুরু দিকে; পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি বলেন, বিভিন্ন কলকারখানার মধ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা বলেন, অনেক কিছুই আমরা দেখতে পাচ্ছি।”
বৃহস্পতিবার সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে ৮৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের ঘোষণা দেন।
বুধবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে র্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেছেন, “পূজাকে ঘিরে একটু উসকানি আছে। কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমরা প্রত্যেকটি বিষয়কে অত্যন্ত সচেতনভাবে দেখব যাতে কেউ কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে।”
এর মধ্যেই আগামী ৯ অক্টোবর থেকে পূজার প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে। বিএনপিও মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েনের জন্য তাদের বিভাগীয় কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অবশ্য পূজার প্রস্তুতির মধ্যে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে অভয় দিয়ে বলেছেন, “আমরা এখন মাঠে আছি, আপনারা নির্ভয়ে পূজামণ্ডপে যাবেন। পূজা করবেন, এই পরব সুন্দরভাবে উদযাপন করবেন।”
আনসারের মহাপরিচালক বলেন, চলমান পরিস্থিতির আলোকে সকল নিরাপত্তা সংস্থার মূল্যায়নের ভিত্তিতে নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় পূজামণ্ডপগুলোতে ‘অধিক গুরুত্বপূর্ণ’, ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এবং ‘সাধারণ’ চিহ্নিত করে সে হিসাবে আনসার মোতায়েন করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের স্বার্থে বাহিনীর সনাতন ধর্মাবলম্বী ব্যতীত অন্য সদস্যদের ছুটি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।









































