বিলীন হবার পথে বরগুনার টেংরাগিরি বন
নভেম্বর ১২ ২০২৫, ২২:৫৩
বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা: বরগুনার টেংরাগিরি সংরক্ষিত বন উপকূলের উত্তাল ঢেউ ও তীব্র ভাঙনের কারণে বিলুপ্তির হুমকিতে পড়েছে। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিক ক্ষয়ে বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় দুই হাজার একর বনভূমি এবং শত শত কোটি টাকার বনসম্পদ।
স্থানীয়রা জানান, যদি অব্যাহত ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, ভবিষ্যতে বনের অস্তিত্বই হারিয়ে যেতে পারে।
পাকিস্তান সরকার ১৯৬০ সালে বরগুনার টেংরাগিরি বনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে। স্থানীয়ভাবে ‘ফাতরার বন’ নামে পরিচিত এই বনটির আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৭.০৩ একর।
বনের পূর্বদিকে কুয়াকাটা, মহিপুর ও আন্দারমানিক নদী, পশ্চিমে লালদিয়া, কুমিরমারাচর, পায়রা ও বিষখালী নদীর মোহনা, উত্তরে সোনাকাটা, নিশানবাড়িয়া ও সখিনা খাল এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। স্বাসমূলীয় গাছের আধিক্যের কারণে এটি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের তীব্র আঘাতে বনের বিরাট অংশের গাছ উপড়ে মাটিতে পড়ে আছে। ভাটার সময় গাছগুলো দেখা গেলেও জোয়ারের সময় সেগুলো সাগরে হারিয়ে যায়। বনের ভেতরে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকায় গাছের গোড়ার মাটি সরে গেছে; যাদের যেকোনো সময় উপড়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, বছরজুড়ে কোটি টাকার বনসম্পদ সাগরে ভেসে যায়।
বনভূমি সঙ্কোচনের পাশাপাশি বনদস্যুদের চরম দৌরাত্ম্য রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, একশ্রেণির অসাধু চক্র দিনের বেলায় গভীর বনে গাছ কেটে রাতের অন্ধকারে ট্রলারে করে পাচার করে। এসব গাছ ইটভাটা ও কাঠবাজারে বিক্রি হয়। উপড়ে পড়া গাছও তারা অবৈধভাবে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের আইলার আঘাতে বনটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর থেকে ভাঙনের হার কয়েকগুণ বেড়েছে। এতে ধুন্দল, কেওড়া, গেওয়া, হেতাল ও রেন্ট্রি প্রজাতির বিপুল সংখ্যক গাছ নষ্ট হয়েছে।
পটুয়াখালী বিভাগীয় সহকারী বন সংরক্ষক মো. আমির হোসেন বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিনষ্ট হওয়া গাছগুলো সরানো হচ্ছে না। এই মরা গাছগুলো ঢেউয়ের প্রভাব যাতে উপকূলে না পড়ে তা বনের ভিতর রাখা হয়। তবে অসাধু ব্যক্তিরা যে বন উজাড় করছে, এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টেংরাগিরি বনের ভাঙনরোধে নতুন করে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়া কমাতে ঝাউসহ অন্যান্য প্রজাতির গাছ ঘন করে লাগানো হচ্ছে।”
পর্যটন খাতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বনের জৌলুস হারানোর কারণে পর্যটকের আগ্রহ কমেছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা জানান, বনের বিলীন হওয়া উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। তারা টেকসই তটরক্ষা বাঁধ ও জোরদার নজরদারির দাবি জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের অন্যতম এই উপকূলীয় বনটিকে টিকিয়ে রাখতে এখনই জরুরি এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।









































