র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অগ্রণী বাহিনী
সেপ্টেম্বর ২৪ ২০২৫, ১৯:১৪
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং আনসারের দক্ষ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত এ বিশেষায়িত বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই র্যাব অপরাধ দমন, জঙ্গিবাদ নির্মূল এবং বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সফলতা
র্যাবের মূল লক্ষ্য দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন। জঙ্গি আস্তানা চিহ্নিতকরণ, গ্রেপ্তার এবং সফল অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে তারা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে র্যাব একাধিক সফল সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালিয়ে জঙ্গি নেটওয়ার্ক দুর্বল করেছে, যা আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসিত হয়েছে।
অপরাধ দমন ও মাদকবিরোধী অভিযান
র্যাব শুধুমাত্র সন্ত্রাস দমনে নয়, সাধারণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, মানবপাচার, অস্ত্র ব্যবসা, ছিনতাই ও ডাকাতি প্রতিরোধে তারা নিয়মিত অভিযান চালায়।
বিশেষ করে মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাবের কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তারা অভিযানে নেমে মাদক জব্দ ও পাচারকারী চক্রকে আইনের আওতায় আনে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও বিশেষ অভিযান
ভিআইপি সুরক্ষা, অপহরণ, ব্যাংক ডাকাতি বা বড় অপরাধ সংঘটিত হলে র্যাব দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে তারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করে তুলছে।
জনগণের আস্থা ও সামাজিক প্রভাব
র্যাবের উপস্থিতি অপরাধীদের মধ্যে ভয় তৈরি করে। রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে র্যাবের টহল, চেকপোস্ট ও আকস্মিক অভিযান অপরাধ প্রবণতা হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। ফলে জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা বোধ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার
র্যাবের সদস্যরা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আধুনিক অস্ত্র, ড্রোন, স্নাইপার, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট, কেএনাইন ইউনিট (স্নিফার ডগ টিম), কমান্ড ভ্যানসহ নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা অভিযানের কার্যকারিতা বাড়িয়েছে।
বিতর্ক ও স্বচ্ছতা
যদিও অতীতে র্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছিল, বর্তমানে বাহিনীটি আরও স্বচ্ছতা ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করছে। র্যাব কর্তৃপক্ষ বারবার উল্লেখ করেছে যে তারা আইন মেনে কাজ করে এবং প্রতিটি অভিযানে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।
র্যাবের কর্তৃক অপারেশন পরিসংখ্যান: (৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ৩১৪টি, হত্যা সংক্রান্ত গ্রেপ্তার ২,৭৮৩, নারী ও শিশু নির্যাতন বিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ১,১৪৩, মাদক সংক্রান্ত অভিযানে গ্রেপ্তার ৫,৪০৬, ছিনতাই বিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ৬৫৪, ডাকাত চক্রের বিরুদ্ধে অভিযানে গ্রেপ্তার ৫৮২, মানব পাচার বিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ৯১, নাশকতা সৃষ্টিকারী আটক ১,১৭৮ ও অন্যান্য আইনে (সাজাপ্রাপ্ত, প্রতারক, চোরাকারবারি, জেল পলাতক, জাল নোট, পর্নোগ্রাফি, বিস্ফোরণ ইত্যাদি) গ্রেপ্তার ৭,৩১৭।
উদ্ধারকৃত সামগ্রী
অস্ত্র ৭০০টি, হেরোইন, ৫০ কেজি, ফেন্সিডিল ১,৩০,১৪২ বোতল, গাঁজা ২৪,১৮৯ কেজি, ইয়াবা ৮,২২৯,৯৫২ পিস, বিদেশি মদ ১৯,৩৩০ লিটার, দেশি মদ ৪৫,২১৯ লিটার, বিয়ার, ৮,৭২০ ক্যান।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে র্যাবের সাফল্য: (২৬ মার্চ ২০০৪ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ১৪,৭১১টি, হত্যা সংক্রান্ত গ্রেপ্তার ৭,১২২, নারী ও শিশু নির্যাতন বিরোধী অভিযানে গেপ্তার ৩,৯১৭, মাদক সংক্রান্ত গ্রেপ্তার ১,৫১,৪০৯, ছিনতাই বিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ১৩,৯৩৩, ডাকাত চক্রের বিরুদ্ধে অভিযানে গ্রেপ্তার ৮,৭৮২, মানব পাচার বিরোধী অভিযানে আটক ১,৮৯১, নাশকতা সৃষ্টিকারী গ্রেপ্তার ২,৭৯৬ ও অন্যান্য আইনে (সাজাপ্রাপ্ত, প্রতারক, চোরাকারবারি, জেল পলাতক, জাল নোট, পর্নোগ্রাফি, বিস্ফোরণ ইত্যাদি) গ্রেপ্তার ১,৫৮,৫৫৩।
মোট উদ্ধারকৃত সামগ্রী
অস্ত্র ২০,৭৮৯টি, হেরোইন ১,১৪২ কেজি, ফেন্সিডিল ৪২,৬২৪৬৩ বোতল, গাঁজা ২,২৮,৭৫১ কেজি, ইয়াবা ১০১,৬২৩,০৫৮ পিস, বিদেশি মদ ৪৮,৪১৫ লিটার/ ২,৮৮,৩৯২ বোতল, দেশি মদ ৭৬৩৫৬৯৫ লিটার/ ১,৭৪৯ বোতল ও বিয়ার ২৩,০৪২ লিটার/ ৬,৫২২৩০ ক্যান।
র্যাবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
র্যাবের মুখপাত্র উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, র্যাব শুধু অপরাধ দমনেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং অপরাধ প্রতিরোধেও মনোযোগী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি মিটিং, সচেতনতামূলক সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে তরুণদের মাদক ও জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে আরও আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যক্রম আরও দক্ষ ও স্বচ্ছ করার পরিকল্পনা রয়েছে র্যাবের।









































