প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কোথায় হবে সেই সিদ্ধান্ত পরে : উপদেষ্টা নাহিদ
সেপ্টেম্বর ০৭ ২০২৪, ১৭:৫৫
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের সিদ্ধান্তের পর শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান গণভবন পরিদর্শন করেছেন।
প্রায় এক ঘণ্টা পরিদর্শন শেষে গণভবনের গেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিন উপদেষ্টা। তারা গণভবন ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান। এ সময় গণভবনকে জাদুঘরে রূপ দিতে আগামীকালের মধ্যে কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান উপদেষ্টারা।
বর্তমান গণভবনকে জাদুঘরে রূপ দেওয়ার পর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কোথায় হবে সে বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘সেটা পরবর্তী সময়ে চিন্তা করে দেখা যাবে। আপাতত সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যেখানে (রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা) আছেন, সেখানেই থাকবেন।’
নাহিদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে গণভবন নামে প্রধানমন্ত্রীর যে বাসভবনটি ছিল, সেটিকে জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে।
যেহেতু ৩৬ জুলাই বা ৫ আগস্ট জনগণ এটি জয় করেছে, অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে ৫ আগস্টের মুহূর্তটি পেয়েছি, সেটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া এবং জনগণের বিজয়কে ধারণ করে রাখার উদ্দেশ্যেই এই জাদুঘর করা হবে।’
‘শুধু বাংলাদেশে নয়, আমরা পৃথিবীর বুকেই এই জাদুঘরকে একটি নিদর্শন করে রাখতে চাই যে, স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট, খুনি রাষ্ট্রনায়কদের আসলে কী পরিণতি হয় এবং জনগণই যে ক্ষমতার মালিক; সে বিষয়টিকে একটি নিদর্শন হিসেবে সারা পৃথিবীর বুকে তুলে ধরার জন্যই আমরা গণভবনটিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই উদ্দেশ্যেই আমরা আজ প্রাথমিক পরিদর্শন করেছি,’ যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই গণপূর্ত ও স্থাপত্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তাদের কাছ থেকে প্রাথমিক পরামর্শ নিয়েছি এবং আমাদের আকাঙ্ক্ষার কথাও তাদের জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হয় তো আগামীকালের মধ্যেই কমিটি গঠন হয়ে যাবে। কমিটি হলে হয় তো আগামী সপ্তাহ থেকেই আমরা কাজ শুরু করব, যাতে দ্রুত এটি উদ্বোধন করা যায়। সেজন্য দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
কমিটিতে কারা থাকবেন জানতে চাইলে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা জাদুঘর বিশেষজ্ঞ, স্থাপত্যের সঙ্গে যুক্ত আছেন তারাই কমিটিতে থাকবেন। সেই সঙ্গে বিদেশ থেকেও জাদুঘর বিশেষজ্ঞ বা এমন অভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদেরও পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে।’
জাদুঘরে কী ধরনের স্মৃতি ধরে রাখা হবে? জানতে চাইলে নাহিদ বলেন, ‘এখানে প্রথমত ৩৬ দিনের অভ্যুত্থানের স্মৃতি, দিনলিপি থাকবে। যারা এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন, তাদের স্মৃতি থাকবে, তালিকা থাকবে এবং এই আন্দোলন ছাড়াও গত ১৬ বছরে যে নিপীড়ন হয়েছে, যারা গুম হয়েছেন, যাদের বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে তাদের তালিকা থাকবে।
আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গণভবন যে ভগ্নাবশেষ অবস্থায় রয়েছে, সেটিকে সর্বোচ্চ সেই অবস্থায় রেখে জাদুঘরটি করা হবে। এখানে কিছু ডিজিটাল রিপ্রেজেন্টেশন থাকবে। আসলে গত ১৬ বছরের একটি চিত্রই সেখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে।’
গণভবন পরিদর্শনের উদ্দেশ্যের কথা জানিয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আমাদের ক্যাবিনেট মিটিং ছিল। সেখানে গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে জনগণের ওপর যে অত্যাচার, গুম, খুন, নিপীড়নের স্মৃতি সংরক্ষণ করে গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে।
এই জাদুঘর জনগণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আজ আমরা সেই উদ্দেশেই প্রাথমিকভাবে গণভবন পরিদর্শনে এসেছি। গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করতে স্থাপত্যশিল্পী, স্থপতি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করে কার্যক্রম শুরু করব।’
সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে জানতে চাইলে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য উদ্যোগ নিচ্ছি এবং বারবার আমরা এই ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ করার জন্য বলছি।
আমরা প্রথম দিন থেকে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। আমরা বারবার বলেছি, আমাদের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছিল ফ্যাসিবাদী শাসনের পক্ষ থেকে, সেই ধরনের আচরণ যেন কারও প্রতি না হয়, সেটাই নিশ্চিত করছি।’
সূত্র- বাসস









































