বরিশালের ২৫ টাকার পেঁপে ঢাকায় ১০০
মে ১১ ২০২৪, ২১:৫৪
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরিশালে বুগঞ্জ এলাকার কৃষক মহব্বত আলী। দীর্ঘদিন তিনি কৃষিকাজের সাথে জড়িত। স্বল্প পুঁজিতে বেশি লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরের মতো এবারও তিনি অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি প্রায় ৫ বিঘা জমিতে পেঁপের চাষ করেছেন।
বিগত বছরগুলোতে প্রতি কেজি পেঁপে ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করলেও এপ্রিল জুড়ে তাপপ্রবাহের কারণে পেঁপের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কৃষক মহব্বত আলীর ভাগ্য প্রসন্ন হয়েছে। এবার তিনি প্রতি কেজি পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। অথচ এই পেঁপে ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। মধ্যস্বত্বভোগীরা একদিকে ভোক্তার পকেট কাটছে, অন্যদিকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। এজন্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন কৃষকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহব্বত আলী সাংবাদিকদের বলেন, গরমের তীব্রতার কারণে অধিকাংশ পেঁপে চাষী নতুন করে চারা উৎপাদন করতে পারেনি। তবে যেসব কৃষকের গত বছরের গাছ ছিলো তারাই পেঁপে বাজারে নিতে পারছেন। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে দায়ী করে এই কৃষক সাংবাদিকদের আরও বলেন, অন্যান্য বছর প্রতি কেজি কাঁচা পেঁপে ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করতাম। কিন্তু এবারের আবহাওয়া কিছুটা ভিন্ন থাকায় আমরা স্থানীয় বাজারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে প্রতি কেজি পেঁপের দাম পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের বাজারে কম দামে পেঁপে বিক্রি হলেও ঢাকার বাজারগুলোতে প্রতি কেজি পেঁপে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর জন্য সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা দায়ী।
তীব্র গরমে পেঁপের কিছুটা দাম পেলেও কৃষক মহব্বতের মতো দেশের অন্যান্য কৃষক সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজির কাছে বঞ্চিত হচ্ছেন। বরিশাল বাবুগঞ্জের আরেক পেঁপেচাষী সুমন আহমেদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে কৃষক বেশি পেঁপে ফলাতে পারেনি।
আমার নিজেরই ১০ লাখ টাকার চারা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এছাড়া নর্থ বেঙ্গল থেকে প্রচুর পরিমাণ পেঁপে প্রতি বছর বাংলাদেশে আসে কিন্তু তাপমাত্রা আধিক্যের কারণে সেটিও এ বছর সম্ভব হয় নি। এ কারণে যাদের কাছে কিছু মাত্র ফলন রয়েছে, তারা আগের চেয়ে ভালো দামে সেগুলো বাজারে ছাড়ছে। তবে দুদিন বৃষ্টিপাত হলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যাক্ত করেন এই চাষী।
তিনি আরও বলেন, এপ্রিল জুড়ে দেশে বয়ে চলা তাপপ্রবাহের কারণে দেশজুড়ে পেঁপের উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় পেঁপের এমন দাম বেড়েছে। তবে দেশে বেশ কয়েকদিন যেহেতু বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগামী দেড় মাসের মধ্যে পেঁপের বাজার স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে।
এদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গত ১৫ দিনে গড়ে প্রতি কেজি পেঁপের দাম বেড়েছে ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ রাজধানী বাজাগুলোতে ২ সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। কিন্তু তীব্র গরমের পেঁপে উৎপদান কমের অজুহাতে এক লাফে পনেরো দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁপের দাম বেড়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
অন্যদিকে ঢাকা বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। যা দু্ই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। আবার পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে প্রতি কেজি পেঁপে ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।ব্যবসায়ীরা বলছেন, তীব্র গরমে পেঁপের উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমেছে।
এর প্রভাব পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে পড়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁপে ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেন বলেন, বছরের এই সময় প্রচুর পেঁপের উৎপাদন হয়। কিন্তু গত মাসে শুরু থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় বাজারে এর একটা প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি কেজি কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকার উপরে। অথচ এক মাস আগেও এই পেঁপে কেজি প্রতি ২৪ থেকে ২৫ টাকায় কেনা যেত। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হতো ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। কিন্তু পাইকারি বাজারে পেঁপের দাম বেশি হওয়ায় খুচরা বাজারে তা ৯০ থেকে ১০০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না।









































