কুয়াকাটায় শুঁটকির উৎপাদন বাড়লেও দুর্ভোগে ব্যবসায়ীরা
জানুয়ারি ০৯ ২০২৪, ১৯:৪২
কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি ॥ পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সামুদ্রিক নানা প্রজাতির তাজা মাছ থেকে করা হচ্ছে শুঁটকির প্রক্রিয়াজাতকরণ। আর এসব মাছে কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে। তাই এখানকার শুঁটকির দেশে ও বিদেশে রয়েছে আলাদা চাহিদা। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছরই এ শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ অঞ্চলের শুঁটকির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
তবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে স্থায়ী পল্লী না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন ব্যবসায়ীসহ শ্রমিকরা। উৎপাদিত শুঁটকি মাছ থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা মৌসুম নির্ভর এ ব্যবসার স্থায়িত্বের পাশাপাশি স্থায়ী পল্লী নির্মাণ এবং এই শিল্পের পরিধি বাড়াতে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি সংশ্লিষ্টদের।
জানা যায়, সামুদ্রিক মাছের সহজলভ্য প্রাপ্তির ফলে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কুয়াকাটায় বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী শুঁটকি পল্লী। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম। এ কাজে অংশ নেয় নারী, পুরুষ ও শিশুসহ এ পেশায় জড়িত পরিবারের একাধিক সদস্য। পোয়া, সোনাপাতা, মধুফাইস্যা, রূপচাঁদা, শাপলাপাতা, চাপিলা, ফাইস্যা, লইট্টা, চিংড়ি, ছুড়ি, হাঙ্গর, ভোল ও কোড়ালসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির কাঁচা মাছ সংগ্রহ করে খোলা জায়গায় বাঁশের মাচা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুঁটকির প্রক্রিয়াজাতকরণ। কোনো প্রকার কীটনাশক ছাড়াই কয়েক প্রজাতির মাছে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের লক্ষ্যে শুধু লবণ মেখে প্রক্রিয়াজাত করায় এর রয়েছে আলাদা স্বাদ, দেশের অধিকাংশ জেলায় এর রয়েছে আলাদা কদর। তবে নির্দিষ্ট কোনো পল্লী না থাকায় বছরের ৬ মাস চলে এ ব্যবসা। ফলে বছরের বাকি ৬ মাস কর্মহীন এবং ন্যায্য মজুরি পায় না বলে দাবি শুঁটকি শ্রমিকদের। তাই তারা সরকারের কাছে স্থায়ী পল্লী নির্মাণের দাবিসহ আর্থিক প্রণোদনা দাবি জানিয়েছেন।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক এনামুল কবির বলেন, কুয়াকাটার শুঁটকির অনেক সুনাম রয়েছে। এখানে এসে নিজ চোখে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা দেখেছি। তারা কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করে না। আমাদের এলাকার চেয়ে দাম অনেক কম। মানও ভালো। তবে স্থায়ী পল্লী থাকলে আরও পরিচ্ছন্নভাবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করতে পারতো ব্যবসায়ীরা।
শুঁটকি শ্রমিক আব্দুর রহিম বলেন, শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করার কোনো নির্ধারিত জায়গা না থাকায় আমরা সৈকতের পাশে এবং নদীর মোহনা কেন্দ্রিক মাছ শুকাই। অনেক সময় উচ্ছেদ অভিযানে সব কিছু ভেঙে ফেলে। ফের শুঁটকি ব্যবসায় আসতে কষ্ট হয়ে যায়। শুঁটকি ব্যবসায় আলাদা করে লোনও পাই না আমরা।
শুঁটকি ব্যবসায়ী বাচ্চু বলেন, অনেক বছর ধরে শুঁটকি ব্যবসা করি তবে স্থায়ী শুঁটকি মার্কেট না থাকায় কিছু দিন পরে উঠে যেতে হয়। কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে অনেক জনপ্রিয়ই হচ্ছে শুঁটকি মাছ। তাই সরকারের কাছে আমরা স্থায়ী শুঁটকি মার্কেট স্থাপনের দাবি জানাই।
কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, সারা দেশে কুয়াকাটার শুঁটকির একটা সুনাম রয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে শ্রমিকদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিতে পারি এবং স্থায়ী শুঁটকি পল্লীর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তবে উন্নত মানের শুঁটকি উৎপাদনের জন্য এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্টদেরকে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।









































