পহেলা বৈশাখে নেই ইলিশ বিক্রির জৌলুস

এপ্রিল ১৪ ২০২৩, ১৫:৫৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ‍॥ আগে পহেলা বৈশাখ এলেই এক শ্রেণির শহুরে মানুষের মধ্যে পান্তা-ইলিশ খাওয়া নিয়ে মাতামাতি শুরু হতো। যদিও পহেলা বৈশাখ উদযাপন বা বর্ষবরণের আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে পান্তা-ইলিশের কোনো সম্পর্ক নেই।

তার পরও মাতামাতির সুযোগে পহেলা বৈশাখের অনেক আগে থেকেই বেশি দাম পাওয়ার আশায় ইলিশ মজুত করতে শুরু করতেন ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু ক্রমে পরিস্থিতি যেন পাল্টেছে। সুস্বাদু মাছ হিসেবে কদর থাকলেও দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে চড়া দামের কারণে এ বছর ক্রেতাদের মধ্যে ইলিশের তেমন চাহিদা নেই। এ ছাড়া আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় বাজারে মাছটির জোগানও কম। যার প্রভাব পড়েছে দামে।

বিভিন্ন বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, করোনা মহামারির আগেও পহেলা বৈশাখ ঘিরে খুচরা বিক্রেতারা এ সময় শত শত কেজি ইলিশ বিক্রি করতেন। কিন্তু সেই বিক্রির জৌলুস এখন আর নেই। বাজারে অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও মানুষের আয় বাড়েনি।

এ কারণে বেশি দাম দিয়ে ইলিশ মাছ খাওয়া এখন অনেকের কাছে বিলাসিতা। অন্যদিকে, গত বছরের মতো এবারও রমজান মাসের মধ্যে পড়েছে পহেলা বৈশাখ। এ কারণে মানুষ ইলিশ কিনছেন কম।

গত বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সোয়া কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়।

৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

হাতিরপুল কাঁচাবাজারে দেখা গেছে, এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

তবে উভয় বাজারেই ক্রেতার সংখ্যা ছিল অনেক কম। বুধবার কারওয়ান বাজারে এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ কিনেছেন তৌহিদুল ইসলাম।

দাম কত নিয়েছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ইলিশ মাছ তো এখন বিলাসী খাবারের মতো। এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম নিল ১ হাজার ৪০০ টাকা। পহেলা বৈশাখের ছুঁতায় আকাশচুম্বী দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

কারওয়ান বাজারের সোনার বাংলা আড়তের ইলিশ বিক্রেতা রবিউল আলম বলেন, গত বছরের মতো এবারও রমজানে পড়েছে পহেলা বৈশাখ। ইলিশ-পান্তা ভাত খাওয়া হয় সকালে। কিন্তু রোজার কারণে সেটা সম্ভব নয়। তাছাড়া এবার ইলিশের দামও তুলনামূলক বেশি।

আগে একজন ক্রেতা একসঙ্গে চার-পাঁচটি ইলিশ কিনতেন। বেশি দামের কারণে এখন সেই সাহস নেই অনেকের। যদি কেউ কেনেন, একটার বেশি নেন না।

দাম বাড়ার পেছনে কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন ইলিশের মৌসুম না। তাছাড়া নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ আছে। ফলে এ সময় ইলিশ পাওয়া মুশকিল।

বাজারে বেশিরভাগ ইলিশই এখন মিয়ানমার এবং চট্টগ্রামের। পদ্মার কিছু ইলিশ আছে, তবে সেগুলো অনেক দিন ফ্রিজে সংরক্ষণ করা ছিল।

দুলাল চন্দ্র দাশ নামে আরেক ইলিশ বিক্রেতা বলেন, একসময় পহেলা বৈশাখের আট-দশ দিন আগে থেকেই শত শত কেজি ইলিশ বিক্রি হতো। সেই জৌলুস আর নেই। এখন দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ কেজির বেশি বিক্রি হয় না।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি ও আমাম সি ফুড ইন্ডাস্ট্রির এমডি হুমায়ুন কবির বলেন, ২০১২ সাল থেকে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

শুধু দুর্গাপূজার সময় বিশেষ বিবেচনায় কিছু ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়। তবে এবার নানা কারণে দাম বেশি ইলিশের। তাই বাজারে ইলিশের জোগান কিছুটা কম।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও