নতুন বইয়ের সংকটে পাঠদান ব্যাহত

ফেব্রুয়ারি ০৮ ২০২৩, ১৩:৪৬

অনলাইন ডেস্ক :: শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের মুখে খুশির ঝিলিক। নতুন বছরের প্রথমদিন নতুন ক্লাসের নতুন বই হাতে পাওয়ার উচ্ছ্বাস। তবে বইয়ের সংকটের কারণে ছন্দপতন ঘটেছে উৎসবের। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে অনেক শিক্ষার্থীর মন খারাপ। কারণ নতুন বইয়ের সুবাস এখনও সম্পূর্ণ পায়নি তারা। জানুয়ারি পেরিয়ে বাঙালির ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির আগমন। এক মাস পেরিয়ে গেলেও জয়পুরহাটে মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের সম্পূর্ণ বই হাতে পায়নি শিক্ষার্থীরা।

জেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রাথমিকসহ কেজি স্কুলগুলোতে ক্লাস চলছে পুরোদমে। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে এই বছর শতভাগ বই দেওয়া হলেও তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পেয়েছে মাত্র দুইটি বই। বাকী ৪টি অর্থাৎ বিজ্ঞান, বাংলা, গণিত ও ধর্ম বই না থাকায় বিপাকে পড়েছে তারা। অপর দিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণির ১২টি বইয়ের মধ্যে ৪টি বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। বাকী ৮টি বই এখনও পায়নি তারা। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কবে নাগাদ বই আসবে তার নিশ্চয়তা না থাকায় দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। কবে আসবে বাকী বইগুলো শিক্ষকদের জানা নেই।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা যায়, ১ম ও ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শতভাগ বই বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সম্পূর্ণ বই বিতরণ করা হয়নি। তৃতীয় শ্রেণিতে বইয়ের বরাদ্দ ছিল ১০ লাখ ৪ হাজার ৬৭৬, এর মধ্যে বই প্রাপ্তি হয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ৪২২; চতুর্থ শ্রেণিতে বইয়ের বরাদ্দ ছিল ১০ লাখ ৪০ হাজার ১০, এর মধ্যে বই প্রাপ্তি হয়েছে ৪ লাখ ১ হাজার ৩৪৩টি; পঞ্চম শ্রেণিতে বইয়ের বরাদ্দ ছিল ৯ লাখ ৯ হাজার ৮৮২, এর মধ্যে বই প্রাপ্তি হয়েছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৮৮২টি।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা যায়, মাধ্যমিকে একমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণির ১২টি বইয়ের মধ্যে ১২টি পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। আর ৭ম শ্রেণির ১২টি বইয়ের মধ্যে ৪টি । কবে আসবে এই ৩টি বই তা তাদের জানা নেই।

জয়পুরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিজান বলেন, বই পেয়েছি ২টি। ক্লাস হচ্ছে ৬টি। স্যাররা ৬টি বইয়ের পড়া দিচ্ছে। ফলে আমার বাকী ৪টি বই না থাকাতে বাড়িতে পড়তে পারছি না। কবে বই পাব?

খঞ্জনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিমি বলেন, গত দুই বছর করোনাকালীন সময়ে শ্রেণিকক্ষে এসে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারিনি। যার কারণে লেখাপড়ায় আমাদের অনেক ঘাটতি আছে। এর মধ্যে নতুন বছরে মাত্র নতুন কয়েকটি বই পেয়েছি। এক মাস পেরিয়ে গেছে এখনও বইগুলো পাচ্ছি না। বই ছাড়া কেমন করে পড়ব আমরা?

এ প্রসঙ্গে অভিভাবক বাসন্তি রানী বলেন, আমার মেয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলে পুরোদমে ক্লাস চলছে। কিন্তু সে চলতি বছর বই পেয়েছে ৪টি। বাকী বই আমি সংগ্রহ করতে পারিনি। ফলে মেয়েকে পড়াতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি । অভাবের সংসার মেয়েকে কোচিং কিংবা প্রাইভেটে দিতেও পারছি না।

এ বিষয়ে খঞ্জনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক বলেন, আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৭ম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, ধর্ম এবং বিজ্ঞানের একাংশ বই ছাড়া অন্যান্য বই পেয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় মেইন বইগুলো না পাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যাহত হচ্ছে। বই না পাওয়ার কারণে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে উদ্বিগ্নতার জায়গা তৈরি হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জল হোসেন জানান, এই জেলায় ৩৭৫টি বিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে শতভাগ বই দিয়েছে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বই দেওয়া হয়েছে ২টি করে। বাকী ৪টি বই এখনো আসেনি। চলতি মাসের মধ্যে আশা করি বাকী ৪টি বই এসে যাবে। আমরা বই হাতে পাওয়ার সাথে সাথেই বিদ্যালয়গুলোতে পৌঁছে দেব।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘চলতি বছরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭৫ শতাংশ বই দেওয়া হয়েছে। বাকী ২৫ শতাংশ বই আমরা এখানো পায়নি। তবে আশা করছি দ্রুত বইগুলো হাতে পাবো। বই পেলেই শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করব।’

এদিকে জয়পুরহাট আমদই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ ওয়াজেদ পারভেজ বলেন, করোনায় টালমাটাল ছিল শিক্ষা ব্যবস্থা। এর মধ্যে চলতি বছর এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও বই হাতে পায়নি শিক্ষার্থীরা। যা জাতির জন্য দুঃখজনক বিষয়। সরকারের কাছে দাবি করেন, দ্রুত বই দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

আমার বরিশাল/আরএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও