চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ৪ বছর: প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ পায়নি দোলা-বৃষ্টির স্বজনরা

ফেব্রুয়ারি ২১ ২০২৩, ১০:৩৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারী বস্তু- বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ। সবাইকে ছেড়ে গিয়ে সেই ভারী বস্তুটাই ও আমার কাঁধে দিয়ে গেল’- এই আহাজারি চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া রেহনুমা তারান্নুম দোলার বাবা দলিলুর রহমান দুলালের। পাশে থাকা মা আর ছোট বোনও কাঁদছিলেন।

চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের চার বছর পূর্তি ছিল গতকাল সোমবার। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারির ভয়াল সেই রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় হাজি ওয়াহেদ ম্যানশনে লাগা আগুনে প্রাণ হারায় ৭১ জন।

এখনো প্রিয়জনের স্মৃতি খুঁজে ফেরেন স্বজনরা। চুড়িহাট্টার অদূরে হাজি রহিম বক্স লেনের ৪১/১ নম্বর ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাটে মা-বাবা ও ভাইদের সঙ্গে থাকতেন বৃষ্টি। তার ছোট ভাই শুভ জানালেন, ঘটনার দিন দ্রুত ফেরার তথা বলে বের হয়ে বৃষ্টি ফিরে আসে লাশ হয়ে।

তার বই আর প্রসাধনগুলো এখন তাদের কাছে স্মৃতি। চার বছর আগের সেই অগ্নিকুণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর দিন কাটে এখনো বিভীষিকা মাথায় নিয়ে।

স্বজনহারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সহায়-সম্বল হারানো পরিবারগুলোকে প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ আজও দেওয়া হয়নি।

অগ্নিকাণ্ডের দিনটি স্মরণে সোমবার সকালে চুড়িহাট্টায় ভিড় জমায় স্বজনহারা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সমন্বয়ে ‘চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সংস্থা’ গঠন করা হয়। সংস্থাটির সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছিলেন সেদিন।

গতকাল দুপুরে হতভাগ্য এই বাবা আমাদের সময়কে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন মেয়র। ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে থেকে ২১টি পরিবারের সদস্যকে দৈনিক মজুরিভিত্তিক মাস্টাররোলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি, ৪টি পরিবারের মাঝে আর্থিক ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই লাখ টাকার চেক প্রদান এবং দুটি পরিবারকে নিজেদের আওতাধীন মার্কেটে দোকান বরাদ্দের কাগজ দেয় ডিএসসিসি।

তবে সেই দোকানের জায়গায় ময়লা ফেলার এসটিএস নির্মাণ করেছে সংস্থাটি। এ ছাড়া মেয়রের প্রতিশ্রুত কাউকেই চাকরি দেওয়া হয়নি। এমনকি ৪টি পরিবারকে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি।

চূড়িহাট্টার সেই ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলায় এমআর টেলিকম সেন্টার নামে একটি দোকান চালাতেন দুই ভাই মাসুদ রানা ও মাহবুবুর রহমান রাজু। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় তাদের।

মৃত্যুর মাত্র ২৬ দিন আগে বিয়ে করেছিলেন রাজু। আগুন কেড়ে নেয় ভ্যানচালক মজিবুর রহমান হাওলাদারের প্রাণও। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে পরিবারের সবাই অথৈ সাগরে পড়েছেন বলে জানান তার ছেলে সুমন হাওলাদার।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সংগঠনের সভাপতি নাসির উদ্দিন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে যে সাহায্য প্রদান করা হয়েছে সেটিই একমাত্র সহায়তা।

৪ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনো ক্ষতিপূরণ কিংবা সাহায্য প্রদান করা হয়নি। চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

আ/ মাহাদী

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও