কি অপরাধ করেছিলো বেল্লাল : হত্যার নেপথ্যে কি ছিলো !

ডিসেম্বর ০৪ ২০২৫, ০৩:৩৮

আহমেদ বায়েজিদ : বরিশাল নগরীর ১০নং ওয়ার্ডস্থ ভাটারখাল এলাকায় জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ওলিউল্লাহ শাহ মাজার সংলগ্ন মার্কেটের তৃতীয় তলায় অবস্থিত একটি কক্ষ থেকে বেল্লাল (২৮) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ও পোড়ার দাগ পাওয়ায় ঘটনাটি রহস্যজনক বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গত (৩ ডিসেম্বর) বুধবার সকালে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। নিহত বেল্লাল বরিশাল সদর উপজেলার পশ্চিম চর আইচা গ্রামের আবুল হকের ছেলে। পেশায় তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক। স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, যেখানে মরদেহটি পাওয়া গেছে সেটি বরিশাল টিভির স্টাফ রিপোর্টার পরিচয়ধারী এবং অনলাইন দৈনিক আলোকিত সংবাদ ২৪ ডটকম-এর সম্পাদক ও প্রকাশক রিপন রানা ওরফে ট্রলার রিপনের অফিস। রিপন রানা ওরফে ট্রলার রিপনের কক্ষ থেকে বেল্লাল (২৮) এর রহস্যজনক মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নেপথ্যে ওঠে আসছে অপরাধচক্র, নারী ব্যবহার, ইয়াবা পার্টি, ব্ল্যাকমেইলিং এবং ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে ‘হানি ট্র্যাপ’ ফাঁদে ফেলার অভিযোগ। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ভূমিকা, রুমের ভেতরের কার্যকলাপ, মৃত্যুর পূর্ববর্তী মুহূর্ত এবং রিপনের কার্যক্রম নিয়ে পুলিশও তদন্তে নেমেছে অপরাধচক্রের খোঁজে।
অভিযোগ রয়েছে, সাংবাদকর্মীর পরিচয় ব্যবহার করে একটি তথাকথিত ও নিবন্ধনহীন অনলাইন নিউজ পোর্টালের ব্যানারে রিপন দীর্ঘদিন ধরে ওই মার্কেটের তিনটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে সেখানে হানি ট্র্যাপ ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
মার্কেটের কয়েকজন দোকানি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) গভীর রাতে কক্ষে একাধিক নারী-পুরুষ প্রবেশ করতে দেখেছেন তারা। অন্যদিকে অসমর্থিত সূত্রের দাবি সেদিন রাতে রিপন, বেল্লাল ও দুই তরুণী মিলে ইয়াবা সেবন করে ফূর্তি করছিলেন। কোনো এক পর্যায়ে তর্কাতর্কির সৃষ্টি হলে বিদ্যুতের শর্ট দিয়ে বেল্লালকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, নারীদের দিয়ে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলিং করে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন চক্রটি। তদন্তে পুলিশ এই চক্রের অতীত কর্মকাণ্ডও খতিয়ে দেখছে। মৃত্যুর আগে ‘ইয়াবা পার্টি’ বাকবিতণ্ডা তারপর মৃত্যু? অসমর্থিত তথ্যসূত্রের দাবি ২ ডিসেম্বর রাতে ওই কক্ষে রিপন, বেল্লাল ও দুই তরুণী মিলে ইয়াবা সেবন করে রাতভর পার্টি করেন। একপর্যায়ে কোনো বিষয় নিয়ে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হলে বেল্লালের ওপর হামলা ও নির্যাতন চালানো হয়।
বেল্লালের শরীরে পাওয়া একাধিক মারধরের দাগ ও সন্দেহজনক পোড়ার চিহ্ন এই অভিযোগকেই আরও জোরদার করেছে। স্থানীয় দোকানিরা জানিয়েছেন “সেদিন রাতে একাধিক নারী-পুরুষকে ওই রুমে ঢুকতে দেখি। ভোরে দরজা খোলা দেখে সন্দেহ হয়, পরে ভিতরে বেল্লালের শরীর পড়ে থাকতে দেখি।” কেউ কেউ বলছেন বিদ্যুতের শর্ট দিয়ে তাকে হত্যা করা হতে পারে।
তবে পুলিশ বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করেনি। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন,“মরদেহের শরীরে মারধর এবং পোড়ার স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয় এটা নিশ্চিত। ঘটনাটি অত্যন্ত রহস্যজনক। সব দিক বিবেচনায় তদন্ত চলছে।” পুলিশ মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মায়া চৌধুরী (২৮), সাদিয়া (২৪) এবং রানা হাওলাদার (৩৬)কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। রিপন রানা ওরফে ট্রলার রিপন পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
নিহতের বাবা আবদুল হক বলেন “আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরে এতগুলো আঘাত কেন? এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়।” পরিবার একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  

এক্সক্লুসিভ আরও