আল্লাহু রাব্বুল আলামিন: অর্থ ও বিশ্লেষণ

অক্টোবর ২৯ ২০২৫, ১১:১৯

ইসলামী পরিভাষায় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত এবং গভীরতম অর্থবহ একটি শব্দগুচ্ছ হলো: ‘আল্লাহু রাব্বুল আলামিন’ (اللّٰهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ) । এ বাক্যাংশ কেবল একটি ধর্মীয় ঘোষণাই নয়, এটি মানবজীবনের দৃষ্টিভঙ্গি, মহাবিশ্বের ব্যাখ্যা এবং ঈমানের মূল ভিত্তিকেও প্রতিফলিত করে।

কুরআনের প্রথম সূরা “আল-ফাতিহা” তেই এই শব্দবন্ধ এসেছে: ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামিন ‘ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল জগতের পালনকর্তা। (সূরা ফাতিহা, আয়াত ২)

অর্থনৈতিক পরামর্শ সেবা
অর্থ-বাণিজ্য প্রতিবেদন
টেলিগ্রাম চ্যানেল
স্বাস্থ্য বিষয়ক ই-বুক
ভ্রমণ প্যাকেজ
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বই
বাজারদর বিশ্লেষণ
স্মার্টফোন
পুঁজিবাজার তথ্য

অপরাধ সংবাদ

অর্থের বিশ্লেষণ: “আল্লাহ” একমাত্র সেই সত্তার নাম, যিনি স্বয়ং অস্তিত্বশীল, যিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। ‘রাব্ব’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, পালনকর্তা, সৃষ্টিকর্তা, রক্ষক, পরিচালক ও অভিভাবক। তিনি যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, তেমনি সৃষ্টিকে জীবনধারণের প্রতিটি উপকরণ দিয়ে পুষ্ট করেন, পরিচালনা করেন ও নিয়ন্ত্রণ করেন। আর ‘ আলামিন’ মানে সমস্ত জগৎ বা সৃষ্টিজগৎ, মানব, প্রাণী, উদ্ভিদ, আসমান-জমিন, জিন, ফেরেশতা, দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সবকিছু।

অতএব, ‘রাব্বুল আলামিন’ অর্থ দাঁড়ায় ‘সকল জগতের পালনকর্তা’। অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা শুধু মুসলমানদের নয়, বরং সমগ্র মানবজাতি, প্রাণীজগৎ, প্রকৃতি ও মহাবিশ্বের প্রতিটি অস্তিত্বের মালিক ও পরিচালক।

আল্লাহর পালনকর্তৃত্বের ব্যাপ্তি: রাব্বুল আলামিন হিসেবে আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি সৃষ্টির জীবনচক্র পরিচালনা করেন। শিশু জন্ম নেয়ার আগেই তিনি তার খাদ্য, বায়ু ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে রাখেন। সূর্য, চন্দ্র, বাতাস, বৃষ্টি, নদী, পাহাড় সবই তাঁর আদেশে নির্দিষ্ট নিয়মে চলছে।

কুরআনে আল্লাহ বলেন: ‘তিনিই তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বাসযোগ্য করেছেন এবং তাতে তোমাদের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করেছেন।’ (সূরা আল-মুলক: ১৫)

এই আয়াত প্রমাণ করে যে, আল্লাহর ‘রুবুবিয়্যাহ’ বা পালনকর্তৃত্ব সর্বব্যাপী, যা শুধু ধর্মীয় নয়, বরং সামাজিক, প্রাকৃতিক ও আধ্যাত্মিক বাস্তবতার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।

রাব্বুল আলামিন-দয়া ও ভালোবাসার প্রতীক: রাব্ব শব্দটি যতটা ক্ষমতার, ততটাই মমতার প্রতীক। যেমন একজন মা তার সন্তানকে যত্নে লালন করেন, তেমনি আল্লাহ তাঁর বান্দাদের যত্নে রাখেন, বরং অসীমভাবে। এ কারণেই সূরা ফাতিহার শুরুতেই বলা হয়েছে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ করুণাময়, দয়াময় আল্লাহর নামে। অর্থাৎ, রাব্বুল আলামিনের ‘রুবুবিয়্যাহ’ ক্ষমতার পাশাপাশি করুণা ও দয়ার প্রকাশও বটে।

‘আলামিন’-সীমাহীন জগতের ইঙ্গিত: ‘আলামিন’ শব্দটি বহু-বচন। এটি শুধু মানুষের নয়, বরং সব সৃষ্টি ও সব যুগের প্রতীক। আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও আজ আমরা জানি, মহাবিশ্ব অসংখ্য গ্যালাক্সি, নক্ষত্র ও গ্রহে পরিপূর্ণ। ইসলামী ব্যাখ্যায় এসবই ‘আলম’ বা জগতের অন্তর্ভুক্ত। অতএব, আল্লাহর ‘রুবুবিয়্যাহ’ সময়, স্থান ও মাত্রার সীমা ছাড়িয়ে, এক অনন্ত ব্যাপ্ত ধারণা।

বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণের শিক্ষা: ‘আল্লাহু রাব্বুল আলামিন’ কেবল একটি তাত্ত্বিক বাক্য নয়, বরং এটি বিশ্বাসের ঘোষণা। একজন মুসলমান যখন এটি উচ্চারণ করে, তখন সে স্বীকার করে যে তার জীবন, রিজিক, মৃত্যু, বিচার-সবকিছুর মালিক কেবল আল্লাহ।
এ বিশ্বাস মানুষকে বিনয়ী করে, অহংকার থেকে দূরে রাখে, কৃতজ্ঞতা ও ধৈর্যের পথে পরিচালিত করে।

সমাজে এর প্রভাব: যে সমাজ ‘রাব্বুল আলামিন’কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে, সে সমাজে শ্রেণি-বিদ্বেষ, বর্ণবৈষম্য বা দমন-পীড়ন টিকে না। কারণ, সবাই একই পালনকর্তার বান্দা এই বিশ্বাস ন্যায়, সমতা ও মানবিকতার ভিত্তি স্থাপন করে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘সমস্ত সৃষ্টিই আল্লাহর পরিবার। তাঁর কাছে সবচেয়ে প্রিয় সে ব্যক্তি, যে তাঁর পরিবারের প্রতি সবচেয়ে উপকারী।’
(আল-মুজামুল আউসাত, হাদিস: ৬১৯২)

‘আল্লাহু রাব্বুল আলামিন’ এ বাক্যে নিহিত আছে অস্তিত্বের গভীরতম সত্য। এটি আমাদের শেখায়- আমরা এক মহান সত্তার সৃষ্টি, যিনি আমাদের লালন-পালন করছেন প্রতি মুহূর্তে। এই উপলব্ধি মানুষকে ঈমানদার, কৃতজ্ঞ, দায়িত্বশীল ও দয়ালু করে তোলে।
যে ব্যক্তি ও সমাজ এ বিশ্বাসে দৃঢ় হয়, তারা জুলুম থেকে বিরত থাকে, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে শান্তি খুঁজে পায়। ‘আল্লাহু রাব্বুল আলামিন’ শুধু কুরআনের সূচনাবাক্য নয়-এটি সমগ্র মানবতার দিকনির্দেশনা। যে হৃদয়ে এ বাক্যের মর্মবাণী প্রবেশ করে, সেখানে অন্ধকার টেকে না; জেগে ওঠে ঈমান, কৃতজ্ঞতা ও আল্লাহভীতির আলোক।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও