বরিশালে আ’লীগ ঠেকাতে মাঠে তৎপর ছিলো বিএনপি-জামায়েতের

নভেম্বর ১৩ ২০২৫, ২৩:৪৮

আরিফ হোসেন ॥ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পূর্বঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিতে বরিশালে শহর থেকে শুরু করে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন সড়কে ছিল স্বাভাবিক দিনের মতো যানবাহনের চলাচল। অন্যদিকে প্রতিদিনের মতই দূরপাল্লার বাস সময় মত উদ্দ্যেস অনুযায়ী ছেড়ে গেছে গন্তর্বে। বাস টার্মিনাল ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে-সড়কে নেই তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা, কোথাও নেই লকডাউনের ছায়া।

সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই সড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। অফিসগামী মানুষ ও পণ্যবাহী ট্রাক নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে। লকডাউন ঘিরে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়ন বিএনপি অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ছাড়া তেমন কোন বড় ধরনে ঘটনা বা নাশকতা এখনো ঘটেনি বরিশালে।

তবে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বা শঙ্কা কাজ করছে। তবে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্যদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলার রায় ঘোষণার কথা ছিলো। কিন্তু আদালত মামলার রায় ঘোষণার তারিখ পরিবর্তন করে ১৭ নভেম্বর নির্ধারণ করার খবর শুনে সড়কে পাহারা থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ স্থানে চলে যায়।

‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নাশকতা, সন্ত্রাসের প্রতিবাদে সারা দেশের ন্যায় বরিশালেও প্রশাসনের পাশাপাশি গণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বরিশাল জেলা ও মহানগর জামায়াত-ছাত্রমিবির এবং বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বরে গণ অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেন তারা। গনঅবস্থান কর্মসূচিতে বরিশাল মহানগর জামায়াতে ইসলামের আমীর মোহাম্মদ জহির উদ্দিন বাবরসহ জেলা ও মহানগর জামাতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশ নেয়। এদিকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকে বরিশাল নগরীতে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক ছিলো। এখন পর্যন্ত জেলার কোথায় বড় ধরনের কোন আপতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে এখনও কঠোর অবস্থানে রয়েছে বরিশালের পুলিশ। এ উপলক্ষে শহরের প্রবেশপথ গুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

এ ছাড়া পুলিশের তল্লাশি চলছে। তবে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বুধবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরী থেকে শুরু করে বিভাগের ৬ জেলা এবং ৪১ উপজেলা দখলে রেখেছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একই সাথে নাশকতা ঠেকাতে প্রস্তত ছিলেন সাধারন মানুষও। নাশকতা প্রতিরোধে টহল জোরদার করেছে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থা।

বুধবার বিকেলে নগরীর জিলা স্কুলের মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বরিশাল মহানগরের নেতৃবৃন্ধরা। গভীর রাতে থেকে শুরু করে ভোর রাত পর্যন্ত রাস্তায় মটরসাইকেল মহড়া ও অবস্থান নেন মহানগর ছাত্রদলের নেতৃবৃন্ধরা।

মহানগর বিএনপির ১ নং যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নাশকতা মোকাবেলায় দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে রাজপথে রয়েছেন তিনি। এ জন্য ১১ নভেম্বর রাতে নগরীতে মোটরসাইকেলের শোডাউন করেছেন। মঙ্গলবার-বুধবার ও বৃহস্পতিবার একইভাবে মোটরসাইকেলের শোডাউনের সাথে সাথে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। নিষিদ্ধ সংগঠনের কোন নেতাকর্মীরা যাতে কোন ধরনের নাশকতা না করতে পারে এ জন্য তারা রাত জেগে সড়কে অবস্থান করবেন। যে কোন মূল্যে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের নাশকতা প্রতিহত করা হবে। তাদের একজন নেতাকর্মীকে নগরীতে দেখা গেলে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে।

বরিশাল জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন রেজা খান ও মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক এ্যাড. মাজহারুল ইসলাম জাহান বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর এমন কোন অপরাধ নেই নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামীলীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে সংগঠিত হয়নি। আর একারনে ফ্যাসিস্ট সরকার শেখ হাসিনাকে রাতের আধারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এখন পালিয়ে থেকেও স্বৈরাচার হাসিনা বাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে লেলিয়ে দিচ্ছে। আমরা ফ্যাসিস্টদের নাশকতা যে কোন মূল্যে প্রতিহত করবো। একই সাথে সড়ক দখলে রেখে সাধারন মানুষকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হবে।

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের নাশকতা প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। তাদের সাথে সাথে তৎপর রয়েছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে দীর্ঘ ১৭ বছর বিএনপির নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারন মানুষের উপর যে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে সে দলের একজন কর্মীকেও শ্লোগান দিতে দেয়া হবে না। দলের নেতাকর্মীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন সাধারন মানুষও। তারাও স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার দোসরদের প্রতিহত করবে।

বিষয়টি নিয়ে বরিশাল মেট্টোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, মহানগরীর সব স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে গোয়েন্দা পুলিশের টিম কাজ করছে। সাথে বিশেষ শাখার পুলিশও নজরদারী বৃদ্ধি রয়েছে। তবে মহানগরীতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা বা নাশকতার কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। এছাড়াও মহানগরীর ৪টি থানায় ২০টিরও বেশী টহল দল পুরো নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে রেখেছে। মহানগরী সহ সমগ্র গোটা দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে সিসি ক্যামেরায় সার্বক্ষনিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হয়েছে।

একই সাথে বরিশাল বিমানবন্দর,নৌ-টার্মিনাল এবং দুটি বাস টার্মিনালে গোয়েন্দা নজরদারী সহ বিশেষ শাখার তৎপরতার সাথে পোশাকে সশস্ত্র পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন। তবে হাসিনার মামলায় রায়ের পর এখনও পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

বিএনপি অফিসে আগুন
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়ন বিএনপি অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ভোর রাতে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, রাত ৩টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত পেট্রোল ঢেলে অফিসটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।আশেপাশের লোকজন টের পেয়ে ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও পুরো অফিস এবং ভেতরে থাকা মালামাল পুড়ে যায়।

ধারণা করা হচ্ছে যে আওয়ামী লীগ ঘোষিত লকডাউন কর্মসূচি সফলের নামে এই আগুন দেয়া হয়েছে। উজিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও