বরগুনায় এক পরিবারে ৪ সদস্যের তিনজনই প্রতিবন্ধী
এপ্রিল ০৯ ২০২৩, ২০:৪১
বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা ॥ বরগুনার তালতলী উপজেলায় একটি গ্রামের একই পরিবারের ৪ সদস্যের মধ্যে তিনজনই প্রতিবন্ধী। সরকারী সহায়তার আশায় বারবার জনপ্রতিনিধি আর প্রশাসনের কাছে ঘুরে ছোট ছেলে রাকিব প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা উপবৃত্তি আর দুইজন পায়না কোন সহায়তা।
তবে প্রতিবন্ধী পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন সমাজ সেবা অধিদপ্তর। বরগুনার তালতলী উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের চান্দখালী গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেন।
এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে হাস, মুরগি, ডিম, শাকসবজি সংগ্রহ করে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে বিক্রি করেন। যা উপার্জন হয় তা দিয়েই কোনমতে চলে তাদের চারজনের সংসার। তবে স্বল্প উপার্জনে কখনো খেয়ে না খেয়ে আবার কখনো আধপেট খেয়ে চলে তাদের জীবন।
১৪ বছর আগেও আনোয়ার হোসেনের জীবন ছিল সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নময়। একটি সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তার জীবনের রং। এখন প্রতিবন্ধী হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। নিজের জমি জমা না থাকলেও মাথা গোজার ঠাই হিসেবে রয়েছে আনোয়ারের বাবার তোলা একটি মাত্র ঘর। সেই ঘরেই এখন তার বসবাস।
শুধু তিনিই নন তার ঘর আলো করে আসা দুই ছেলেও মানসিক ভারসম্যহীন। ছেলে-সন্তান স্ত্রী নিয়ে এখন তার দুর্বিষসহ জীবন সংসার তার। ছেলেদের উন্নত চিকিৎসা, নিজের চিকিৎসা ও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তার জন্য সরকার ও বিত্তবানদের সহযোগীতা প্রত্যাশা করেছেন এই পরিবার।
আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নাছিমা বেগম বলেন, অনাহারে অর্ধাহারে জীবন চলে আমার পরিবারের। আমার স্বামী প্রতিবন্ধী এক সড়ক দুর্ঘটনায় সে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। সে আমাদের প্রতিবেশীদের থেকে শাক, সবজি, ডিম, হাঁস, মুরগি, যা পায় তা কাছাকাছি বিক্রি করেন ।
আর তাতে যে টাকা পায় তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। আর আমি যে অন্য কারো বাড়িতে কাজ করব সে সুযোগটাও আল্লাহ আমাকে দেয়নি কারণ আমার সব সময় ছেলে দুটো কাছে আমাকে থাকতে হয় ওদের দেখলে মানুষ ভয় পায় তাই ওদেরকে মানুষ একা পেলে মারধর করে সেজন্য সবসময়ই ওদের সাথেই আমাকে থাকতে হয়।
এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সরকার আমাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করলে আমার স্বমী ও দুই প্রতিবন্ধী ছেলে নিয়ে সংসার কোন মতে চালাতে পারতাম। আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার দুই ছেলে প্রতিবন্ধী আমি নিজেও প্রতিবন্ধী। আমার সংসার চালানো কোন রাস্তা নাই।
আমার প্রতিবন্ধী দুই ছেলে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তাদের চিকিৎসা এবং ভরণপোষণ, দেখভাল করা আমার পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হলে ছেলেদের সুচিকিৎসা করে স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে দেখতাম।
এলাকার বাসিন্দা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হারুন সরদার বলেন, প্রতিবন্ধী অসহায় এই পরিবারটির পাশে সরকারসহ সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে পরিবারটি। তাই আমাদের দাবি পরিবারটিকে সুস্থ সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়ার।
স্থানীয় বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, আনোয়ার হোসেনের অসহায় প্রতিবন্ধী এই পরিবারটির পাশে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি কিছুটা হলে স্বস্তি ফিরবে তাদের দুর্বিষহ জীবনে।
বরগুনার তালতলী উপজেলার ১নং পঁচাকোড়ালীয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আ: রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, দ্রুত আমার সাধ্য অনুযায়ী ওদের সহযোগিতা করব এবং সরকারি ও বে-সরকারি সংস্থা থেকে যদি কোন সহযোগিতা করা যায় সেটাও চেষ্টা করবো। তিনি আরো বলেন, আমি সমাজের বিত্তবানদের ওদের পাশে দাঁড়ানো আহব্বান জানাচ্ছি।
বরগুনা সমাজ সেবা কার্যালয় উপ পরিচালক,মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধীভাতাসহ এই অসহায় দরিদ্র পরিবারটি যাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আর্থিক সহায়তা পেয়ে সাবলম্বি হতে পারে সে বিষয়ে শীঘ্রই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া পরিবারটিকে আরও সহযোগিতার চেষ্টা করবেন তিনি।









































