মরুর দেশের থেকেও তাপমাত্রা বেশি বাংলাদেশে!
এপ্রিল ১৫ ২০২৩, ২৩:৫৭
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: এ বছর চৈত্র মাসের শুরু থেকেই তীব্র তাপদাহে পুড়ছে সারাদেশে। চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ।
রমজান মাসে এমন গরম আর শুষ্ক আবহাওয়ায় সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। অনেকে এই আবহাওয়া পরিস্থিতিকে মরুভূমির সঙ্গে তুলনা করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মরুর দেশগুলোর থেকেও বেশি তাপমাত্রা রয়েছে বাংলাদেশে।
শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা মরুর দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতার, কুয়েতকেও ছাড়িয়ে গেছে।
ওয়ার্ল্ড ওয়েদারের সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, শনিবার সৌদি আরবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়ার, কাতারে ২৭ ডিগ্রি, কুয়েতে ২৭ ডিগ্রি এবং ওমানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বর্তমানে বাংলাদেশে যে তাপমাত্রা তা এ সময়ের অন্যান্য বছরের তুলনায় গড়ে ৭ ডিগ্রি বেশি। এই পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ সরাসরি দায়ী না হলেও এর থেকে পুরোপুরি উত্তরণ নিজেদের হাতে নেই বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
কারণ হিসেবে তারা বিশ্বের অনেক দেশ বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নির্গত মাত্রাতিরিক্ত গ্রিনহাউজ গ্যাস দেশের উষ্ণায়নের জন্য দায়ী বলে মন্তব্য করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে যথাযথ এখন থেকেই সর্বাত্মক পদক্ষেপ না নিলে ২০৩৭ সাল নাগাদ দেশে এখনকার তুলনায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। আর ২০৫১ সাল নাগাদ তা আরও ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কেন বাড়ছে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকা শহরের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে এত গরম হওয়ার কথা নয়।
কারণ, এখানে ছয়টি নদী, শতাধিক খাল ও অসংখ্যা জলাশয় ছিল। ফলে তাপমাত্রা বেশি হলে এখানে অভ্যন্তরীণভাবে জলীয় বাষ্প তৈরি হয়ে মেঘ সৃষ্টি হতো। প্রাকৃতিক উপায়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হতো।
কিন্তু সব জলাভূমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এখন শহরে ভবনের ভেতর শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে তাপমাত্রা কমানো যাচ্ছে না। এসি ব্যবহারের ফলে তাপমাত্রা আরও বাড়ছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সম্পাদক ও ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরিফ জামিল বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নির্গত মাত্রাতিরিক্ত গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ দেশের উষ্ণায়নের জন্য দায়ী।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে গ্রীষ্মে দেশে গড় তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। আর বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছতে পারে ৪৬ ডিগ্রি পর্যন্ত।
রাজশাহী, পাবনা, নাটোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে পুরো মরুভূমির অবস্থা চলে আসতে পারে। তাই এর থেকে কিছুটা মুক্তি জন্য এখনই ওইসব অঞ্চলে ব্যাপক হারে সবুজায়ন শুরু করতে হবে। পদ্মায় পনি প্রবাহ স্বাভাবিক করে চরগুলোতে বৃক্ষায়ণ শুরু করতে হবে।
দেশের অভ্যন্তরে শিল্পকারখানা পরিবেশ বান্ধব করার পাশাপাশি যানবাহনের নির্গত কার্বন মনো অক্সাইড অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলেও বনায়নও জরুরি। নইলে নিকট ভবিষ্যতে আমাদের যে ধরণের ভয়াবহ গরমের সম্মুখীন হতে হবে তা থাকবে সহ্য সীমার বাইরে।’
তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। বৃদ্ধি পাচ্ছে বন্যা ও খরার প্রবণতা।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ, যদিও এর জন্য বাংলাদেশ খুব একটা দায়ী না। বৈশ্বিক মাত্র ০.৫৬ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের জন্য বাংলাদেশ দায়ী হলেও জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ক্ষতিগ্রস্ত দেশ।









































