মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ

মার্চ ২৬ ২০২৩, ০০:৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে/জাগছে বাঙালিরা/আজ রুখবে তাদের কারা’। স্বাধীন বাংলার বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত প্রথম গানের মধ্যে এটি অন্যতম গান, যা উৎসাহ উদ্দীপনা জাগিয়েছে মুক্তিপাগল বাঙালিদের।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক জনসভায় বজ্রকণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েছিল বাংলাদেশের আপামর মানুষ।

সেই থেকে শুরু স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। ২৫ মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী গভীর রাতে চালায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। হতভম্ব হয় বিশ্ববাসী, স্বাধীনতার শপথ নেয় ক্ষুব্ধ বাঙালি। শুরু হয় মুক্তির লড়াই।

১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত সাইমন ড্রিংয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বঙ্গবন্ধুকে টেলিফোনে সতর্ক করা হয়েছিল যে, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।

কিন্তু তিনি বাসা ছেড়ে চলে যেতে অসম্মতি জানান। তিনি তাঁর এক সহযোগীকে বলেছিলেন, ‘যদি আমি আত্মগোপন করি, তবে তারা আমাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য গোটা ঢাকা জ্বালিয়ে দেবে।’

২৫ মার্চের রাত ১টা ১০ মিনিট। কয়েকটি ট্রাকবোঝাই সৈন্য বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাড়ির ওপর দিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে রাস্তা ধরে এগিয়ে আসে।

তারা বাসার সামনে আসার পর একজন অফিসার বলেন, ‘আপনি নেমে আসুন। বঙ্গবন্ধু তাঁর বেলকনিতে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘হ্যাঁ, প্রস্তুত।

তবে গুলি ছোড়ার দরকার ছিল না। আপনারা আমাকে টেলিফোন করে তারপর আসতে পারতেন’। অফিসারটি তাঁর বাড়ির ভেতরে ঢুকে বঙ্গবন্ধুকে বললেন, আপনাকে গ্রেফতার করা হলো।

সারা রাত গোলাগুলি চলে, থেমে যায় ২৬ মার্চ ভোরে। তার আগেই বঙ্গবন্ধুর তারবার্তায় চলে আসে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা। দীর্ঘ ৯ মাস চলে মুক্তিযুদ্ধ।

৩০ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে, লাখো অজানা মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকের এ স্বাধীন বাংলাদেশ।

যুগে যুগে তাদের নিয়ে লেখা গান অমর হয়ে থাকবে। ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা/আমরা তোমাদের ভুলব না’।

স্বাধীনতা এলো। এলো বাংলার নাগপাশ রাহুর মুক্তি নিয়ে। তাই তো কবি গেয়ে উঠলেন, ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে/মোর চোখ হাসে মোর মুখ হাসে/ টগবগিয়ে খুন হাসে’। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের গৌরবময় ৫২ বছর পূর্ণ হলো আজ।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচি : এদিকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথকভাবে বাণী দিয়েছেন।

দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

এ দিবসে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান ভবনগুলোয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।

ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদক দল বাদ্য বাজাবেন।

আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র, নিবন্ধ ও সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করছে।

শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে।

এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করেছে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় দেশের শান্তি সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। দেশের সব হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

আজ দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকেটে উন্মুক্ত রাখা হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজগুলোয় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করা হবে।

আ/ মাহাদী

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০

এক্সক্লুসিভ আরও