‘জনসভা বিএনপির, ধর্মঘট সরকারের, কষ্ট মোগো’

নভেম্বর ০৬ ২০২২, ১৭:৩৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার পাটিকেলঘাটা গ্রামের মিরাজ মাহামুদ বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে রক্ত দিতে হবে। এ জন্য তাঁর গ্রাম থেকে আসবেন রক্তদাতা সোহরাব হোসেন।

মিরাজ মাহামুদের বড় ভাই মুনির হোসেন শেবাচিমের জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে বারবার ঘড়ি দেখছিলেন আর মোবাইলে ফোন করছিলেন। জানতে চাইছেন- সোহরাব কতদূর?

ধর্মঘটের কারণে বাস-অটোরিকশা বন্ধ। তাই রক্তদাতা গ্রাম থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন ব্যাটারিচালিত রিকশায়।চোখেমুখে দুশ্চিন্তায় ছাপ নিয়ে মুনির হোসেন বলেন, ‘ও আল্লাহ মানুষ যে কত ভোগান্তিতে আছে, দেহার কেউ নাই’। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে উৎকণ্ঠার এমন চিত্র দেখা গেছে।

বরিশাল নগরীর পাশের উপজেলা বাবুগঞ্জ। এ উপজেলার ওলানকাঠি গ্রামের ফারুক হোসেন তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া আক্তারকে শেবাচিম হাসপাতালে এনেছেন গতকাল দুপুর পৌনে ১টায়।

অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে অটোরিকশায় করে স্ত্রীকে নিয়ে আসেন। ক্ষুুব্ধ ফারুক হোসেন বলেন, ‘জনসভা বিএনপির, ধর্মঘট ডাকছে সরকার আর কষ্ট হয় মোগো’।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সবুজনগর গ্রাম থেকে আলাউদ্দিন মিয়া স্ত্রী মুন্নি বেগমকে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন দুপুরেই।

তাঁরা অ্যাম্বুলেন্সে এলেও পথে পথে বাধা পেয়েছেন। আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘আমাগো ৫-৭ জায়গায় থামাইছে, দ্যাখছে রোগী আছে কিনা, অনেক ঝামেলা পোয়াইয়া বরিশাল আইছি’।

গতকাল দুপুরে ছেলে মো. মতিনকে একটি ইজিবাইকে করে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে আসেন বাবা নুর মোহাম্মদ ফকির। তাঁদের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নে। গরম পানি পড়ে মতিনের মুখমণ্ডল ও বাম হাত ঝলছে গেছে।

নুর মোহাম্মদ ফকির বলেন, একটি অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার জন্য বহু চেষ্টা করছি, পাইনি। কেউ আসতে চাইল না। শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে ভ্যানে বাকেরগঞ্জ যাই।

বাকেরগঞ্জ থেকে ইজিবাইকে শেবাচিম হাসপাতালে এসেছি। ক্ষোভ ঝেড়ে নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘এভাবে মানুষকে কষ্ট দিয়া লাভ কী’? শুধু সোহরাব, ফারুক বা নুর মোহাম্মদ নন, গতকাল বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বিভাগের ছয় জেলার লাখো মানুষ।

গত বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয় এ দুর্ভোগ। সরকারি দলের প্রচ্ছন্ন ঈশারায় ধর্মঘট ডাকে মালিক-শ্রমিক গ্রুপ। পরে একে একে বন্ধ হতে থাকে বাস, অটোরিকশা, লঞ্চসহ যাত্রীবাহী ট্রলার।

ধর্মঘটে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিচ্ছিন্ন জনপদে পরিণত হয় দক্ষিণাঞ্চলের এ গুরুত্বপূর্ণ শহর। সাধারণ মানুষ শহর থেকে বাইরে যেতেও পারেনি, তেমনি কেউ আসতেও বড় কষ্ট পোহাতে হয়েছে।

গতকাল বরিশাল নগরীতে কিছু রিকশা ছাড়া আর কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। বড় বড় শপিংমলসহ অধিকাংশ দোকানপাটও ছিল বন্ধ।

দুপুর পর্যন্ত গোটা শহর মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলও ছিল সীমিত। বাড়িতে ৪ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন বরিশালের হিজলা উপজেলার একতাবাজার এলাকার কৃষক শামসুল হক বেপারী।

বৃহস্পতিবার উপজেলা হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছেন তিনি। ওই দিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে যেতে বলা হয়েছিল উপজেলা হাসপাতাল থেকে।

কিন্তু শুক্রবার ধর্মঘটের কারণে কোনো যানবাহন পাননি বলে জানান শামসুল হক বেপারীর ছেলে নুর হোসেন। নুর হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার যানবাহন পাই নাই, আজ বাড়ি দিয়া ভ্যানে করে মীরগঞ্জ ফেরিঘাট পর্যন্ত আইছি।

মীরগঞ্জ দিয়া একটা অটোরিকশায় হাসপাতালে আইলাম। এভাবে মানুষেরে কষ্ট দিয়া কার যে কী লাভ হয় আল্লায় জানে। মোগো গরিব মানসের কোনহানে শান্তি নাই।’

কীর্তনখোলা নদীর পূর্বতীরে বরিশাল সদর উপজেলার রাজারচর গ্রামের রাসেল গাজী বৃহস্পতিবার থেকে প্রচণ্ড জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।

রাসেল গাজীর স্ত্রী জেসমিন বেগম বলেন, বেলতলা ঘাটে ফেরি চলে না, আমরা দপদপিয়া সেতু পার হয়ে ৫-৬ কিলোমিটার ঘুরে হাসপাতালে এসেছি।

রাসেল গাজীর ভাই শফিকুল ইসলাম নেছার বলেন, ‘সরকারি হরতালে মানুষের কষ্টের শেষ নাই। এসব করে মানুষের মন পাওয়া যাবে না’।তেমনি ভুক্তভোগীদের একজন মো. সোহেল। নগরীর পলাশপুরের এ বাসিন্দার স্ত্রী রেশমা বেগম শনিবার সকালে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েন।

সোহেল বলেন, রেশমাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অটো বা অ্যাম্বুলেন্স- কিছুই পাইনি। রিকশায় পাঁজাকোলা করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। রিকশায় কী রোগী আনা যায়?

আ/ মাহাদী

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

এক্সক্লুসিভ আরও