বাংলাদেশ সেরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কাটাচ্ছে
নভেম্বর ০৫ ২০২২, ১১:৩১
স্পোর্টস ডেস্ক :: প্রত্যাশার বেলুন চুপসে ছিল দেশ ছাড়ার আগেই। প্রত্যাশাহীন এক যাত্রা। এমন কী একটা আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের লক্ষ্যের কথাটাও জানায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। দলের অধিনায়ক ব্যস্ত ছিলেন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে। কোনরকম একটা গ্রুপ ছবিও তোলা হয়নি। সাদামাটাভাবেই বিশ্বকাপ মিশনে দেশ ছেড়েছিল বাংলাদেশ দল। ২০ ওভারের ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থানটা জানা ছিল বলেই হয়তো প্রতিশ্রুতির কোন ফাঁকা বুলি ছিল না!
অথচ সেই বিশ্বকাপের কি-না ধরা দিল সেরা সাফল্য। ২০০৭ সালে প্রথম টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে যে একটা বড় জয় এসেছে, তারপর থেকে অংশগ্রহণই ছিল অর্জন। বড় দলকে হারানোর ব্যর্থতা তো ছিলই, দ্বিতীয় রাউন্ডে যে জয় সোনার হরিণ হয়েই ছিল এতোদিন। কিন্তু এবার অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ব্যর্থতার সেই চোরাগলি পেরিয়ে নতুন এক দিগন্তে দেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। এখানে প্রমাণ হয়েছে এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ লড়তে জানে, জিততেও জানে!
প্রথমে নেদারল্যান্ডস এরপর জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। এরপর ভারতের বিপক্ষে বিতর্কিত দুটো ঘটনা না ঘটলে তো জয় নিয়েই সেমি-ফাইনালের পথটা পরিস্কার করতে পারতো টাইগাররা। সেটি হয়নি। সুপার টুয়েলভে শেষ ম্যাচে রোববার অ্যাডিলেড ওভালে পাকিস্তানের সঙ্গে লড়বে দল। এই ম্যাচটা জিতলেও শেষ চারে খেলার গ্যারান্টি নেই।
যদি-কিন্তুর মারপ্যাঁচে যে সমীকরণ তা বুঝতে গেলে চিত্রনায়ক অনন্ত জলিলের সেই বিজ্ঞাপনের ভাষার মতো ‘অসম্ভবকে সম্ভব’ করতে হবে। নিজেদের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে রোববার জিততে তো হবেই, সঙ্গে চাইতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকা হার, কিংবা নিদেনপক্ষে বৃষ্টির বাগড়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি। আবার নিজেদের বড় জয়ের পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা জিতলেও আশাটা পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে না, তখন ভারতকে জিম্বাবুয়ের হারতে হবে বড় ব্যবধানে।
তবে বাংলাদেশ দল এতোসব ভাবতে রাজি নয়। সবচেয়ে স্বস্তির খবর ২০ ওভারের ক্রিকেটে পথ খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ। দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম বরং তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন এই ভেবে যে এটিই বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা টুর্নামেন্ট।
শ্রীরাম শনিবার জুম সংবাদ সংবাদ সম্মেলনে এসে বলছিলেন, ‘দেখুন, এটিই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে কখনো সুপার টুয়েলভে দুই ম্যাচ জেতেনি। এবার সেটা হয়েছে। আমার মনে হয় ছেলেদের এটা নিয়ে গর্ব করা উচিত।’
তবে সেই গর্বের আগে শেষ ম্যাচটা জিততে চায় বাংলাদেশ দল। অনেকটা জয়ে শুরু, জয়ে শেষ। এই কথাটা মাথায় আছে শ্রীধরনেরও। প্রথম ম্যাচে ডাচদের হারিয়েছিল দল। শ্রীরাম বলছিলেন, ‘আমি প্রতিটি সংবাদ সম্মেলনেই পরিষ্কার থেকেছি- আমরা একটা ম্যাচ নয়-পরিকল্পনা করি এক দল নিয়ে। যতগুলো ম্যাচ খেলি, সেগুলো অবশ্যই জিততে চাই। আমরা জানি পাকিস্তান কী ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হতে পারে। নিউজিল্যান্ডে তাদের বিপক্ষে খেলেছি নিকট অতীতে। তাদের জন্য আমাদের অনেক সম্মান আছে। আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং নিজেদের সেরাটা দিতে হবে।’
পাকিস্তান দলটা অবশ্য পথ হারিয়ে সেরা সময়ে নেই। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে হেরে চলে গিয়েছিল খাদের কিনারে। পরের দুই ম্যাচে জিতে অবশ্য সুপার টুয়েলভের দুই নম্বর গ্রুপে বাংলাদেশের সমান ৪ পয়েন্ট ঝুলিতে ঢুকেছে তাদের। তাদের হারানোটা অবশ্য সহজ নয়। অন্তত অতীত পরিসংখ্যান তাই বলে। এই ফরম্যাটে ১৭ বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। যেখানে পাকিস্তান জিতেছে ১৫টিতে। ২টিতে বাংলাদেশ!
তবে বাংলাদেশ যখন ২০ ওভারের বিশ্বকাপে সেরা সময়টা কাটাচ্ছে তখন প্রত্যাশার ঘুড়িতে সুতো ছেড়ে দেওয়াই যায়। বাবর আজমদের বিপক্ষে জয় নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করলে হাসিমুখেই দেশে ফেরা যাবে!
আমার বরিশাল/ আরএইচ