স্বপ্ন দেখিয়ে বিদেশে নিয়ে নির্যাতন করেন তারা
নভেম্বর ০১ ২০২২, ১৮:৪১
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: পিরোজপুরের নাজিপুর এলাকার বাসিন্ধা শফিকুল ইসলাম (৩৮)। অনেকদিন ধরে ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর।
সেই স্বপ্নকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে একটি চক্র। স্বপ্ন পূরণ করতে ১৩ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার জন্য চুক্তি করেন তিনি।
প্রথমে সাত লাখ টাকা দেন ও পরবর্তীসময়ে আরও পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল শফিকুলের। ইতালি যাওয়ার কথা বলে প্রথমে দুবাই, পরে সিরিয়া হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে শফিকুলকে নির্যাতন করতো একটি সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্র।
চক্রটি নির্যাতনের কথা পরিবারকে জানিয়ে ১০, ১২ ও ২০ লাখ টাকা আদায় করত। ভুক্তভোগীর এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ওই চক্রের বাংলাদেশি দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ভুক্তভোগী শফিকুল বলেন, আমার মধ্যবিত্ত পরিবার। জিম্মির পর আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে।
বড় ভাইকে জানানোর পর তিনি অনেক চেষ্টা করেও টাকা সংগ্রহে ব্যর্থ হন।
তিনি তেজগাঁও ডিবি পুলিশকে জানানোর পর গত ২৭ অক্টোবর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়।
সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের দেশীয় দুই সদস্য বাদশা (৩১) ও রাজিব মোল্লাকে (৩৫) গ্রেফতার করে।
গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি জানায়, না জেনে, না বুঝে ইউরোপে যেতে উদগ্রীব তরুণ যুবকদের টার্গেট করে ফাঁদ পাতে দেশে ও লিবিয়ায় অবস্থানকারী চক্রের সদস্যরা।
তাদের মাধ্যমে অনেককে অবৈধভাবে দুবাই থেকে নৌ, সড়ক পথ পাড়ি দিয়ে লিবিয়ায় নেওয়া হয়েছে। অনেকের মৃত্যুও হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি প্রধান) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ বলেন, ইউরোপে পাঠানোর নাম করে দুবাইয়ে নেওয়ার পর ডলার, পাসপোর্ট নিয়ে অবৈধ পথে লিবিয়ায় নিয়ে জিম্মি করা হচ্ছে বাংলাদেশিদের।
সম্প্রতি শফিকুল নামে এক বাংলাদেশিকে ইউরোপ পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে জিম্মি, নির্যাতন করা হয় টাকার দাবিতে।
পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ফিরিয়ে আনা হয় লিবিয়া থেকে অপহৃত শফিকুলকে।
ডিবি প্রধান বলেন, সারা দেশে অনেক থানাতেই মানব পাচারের অভিযোগে মামলা হচ্ছে।
অনেক তরুণ-যুবক ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তিতে ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে অনিশ্চিত যাত্রা শুরু করে। তাদের অনেককে দুবাই নিয়েই জিম্মি করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেফতার আন্তঃদেশীয় সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের সদস্য।
বাদশা ও রাজিব দেশের বেকার যুবক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকদের ইতালি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় পাচার করে।
তাদের খপ্পরে পড়ে অনেকে এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
কেউ কেউ মারা গেছেন। কেউ এখনো টাকা দিতে না পারায় নির্যাতিত হচ্ছেন, বন্দি জীবনযাপন করছেন।
দেশের বাহিরের মানবপাচার চক্রের বিষয়ে হারুন বলেন, দেশের বাইরে যারা মানব পাচারে জড়িত তাদের গ্রেফতার সম্ভব নয়।
যেহেতু মামলা হয়েছে, আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেব।
পাশাপাশি দেশ থেকে যদি কেউ বৈধভাবে ইউরোপ পাঠানোর স্বপ্ন দেখাতে না পারে সেজন্য দেশে অবস্থান করা মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া বিভিন্ন প্রলোভন ও চক্রের খপ্পরে পড়ে তরুণরা জিম্মি হচ্ছে লিবিয়ায়, পরিবারগুলো নিঃস্ব হচ্ছে।
তাই যথাযথ প্রক্রিয়ায় বৈধভাবে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইউরোপে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
লিবিয়া থেকে উদ্ধারের পর দেশে ফেরা ভুক্তভোগী শফিকুল বলেন, দুবাই যাওয়ার পরই বুঝতে পারি একা নই, আরও অনেক বাংলাদেশিকে তারা এখানে আনার পর জিম্মি করেছে।
লিবিয়ায় নেওয়ার পর ভয়ানক নির্যাতন নেমে আসে। অথচ দেশে থাকতেই সাত লাখ টাকা দিয়েছিলাম।
কথা ছিল ইতালিতে চাকরি হওয়ার পর বাকি পাঁচ লাখ টাকা নেবে।
কিন্তু তারা ইতালি তো দূরের কথা লিবিয়ায় নিয়ে বন্দি করে, নির্যাতন করে টাকা আদায় করে।
আ/মাহাদী