পালিত কন্যার সঙ্গে ‘যৌনসম্পর্ক’, রাম রহিমের মুক্তির বিরোধিতায় মোদিকে চিঠি

অক্টোবর ২৯ ২০২২, ২০:০৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: সম্প্রতি ভারতের উত্তর প্রদেশের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম প্যারোলে ৪০ দিনের জন্য জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

কিন্তু খুন, ধর্ষণে দোষী রাম রহিমের প্যারোলে মুক্তিতে খুশি নন দেশটির অনেকেই। আজ শনিবার দেশটির সংবাদ মাধ্যমের খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

রিপোর্ট, দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়াল রাম রহিমকে জেলে ঢোকানোর দাবি জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন।

স্বাতীর দাবি, রাম রহিমের মতো অপরাধীকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার অর্থ হল, দেশজুড়ে সমস্ত ‘নির্ভয়া’র নিরাপত্তা ছিনিয়ে নেওয়া।

স্বাতী বলেন, ‘রাম রহিম একজন ধর্ষক এবং খুনি। আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে কিন্তু হরিয়ানা সরকার যখনই চায়, তাকে প্যারোলে মুক্ত করে।

ও জেল থেকে বেরিয়েই সৎসঙ্গের আয়োজন করছে এবং সেই অনুষ্ঠানে হরিয়ানা সরকারের ডেপুটি স্পিকার এবং মেয়রও যোগ দিচ্ছেন।’

স্বাতী আরও দাবি করেছেন, গুরমিতের সৎসঙ্গে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারা সকলেই তার ভক্ত। হরিয়ানা সরকারের কাছে গুরমিত প্যারোল বাতিল করে তাকে জেলে পাঠানোর আবেদন করেছেন স্বাতী।

গত কয়েক দিন ধরেই রাম রহিমের প্যারোলে মুক্তি নিয়ে হরিয়ানার রাজনীতি সরগরম। মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর শুক্রবার দাবি করেন, ‘সরকার কাউকে মুক্তি দেয় না। মুক্তি দেয় আদালত। এর বেশি এ নিয়ে আর কিছু বলব না।’

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, খুন, ধর্ষণের পাশাপাশি রাম রহিমের বিরুদ্ধে আরও একগুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে।

তার মধ্যে অন্যতম চাঞ্চল্যকর অভিযোগ রাম রহিমের পালিত কন্যা হানিপ্রীতকে নিয়ে।

রাম রহিম ডেরা সাচ্চা সৌদা নামের একটি সম্প্রদায়ের নেতা- হরিয়ানার সিরসায় তার প্রকাণ্ড হাই-টেক আশ্রম।

রাম রহিম গ্রেপ্তার হওয়ার পরে ডেরা সমর্থকদের হিংসায় অন্তত ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

দাঙ্গা-হাঙ্গামায় ইন্ধন দেওয়া এবং রাম রহিমকে পালাতে সাহায্য করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন হানিপ্রীত ইনসান ওরফে প্রিয়ঙ্কা তানেজা।

ধর্ষণ ও খুনের দায়ে ২০ বছরের জেল খাটছেন রাম রহিম। এ বার প্যারোলে বেরিয়ে এসে রাম রহিম বলেছেন, ‘আমাদের কন্যার নাম হানিপ্রীত।

অনেকে তাকে ‘দিদি’ বলে ডাকেন। কিন্তু এতে একটা জটিলতাও হয়, কারণ সবাই তো দিদি।

তাই আমরা এখন তার নাম দিয়েছি ‘রুহানি দিদি’। উচ্চারণ করতে যাতে সুবিধে হয়, তাই এই নামটাকেও একটু আধুনিক করে বলা যায়, ‘রুহদি’।’

১৯৯৯-এ হানিপ্রীত ওরফে রুহদি ওরফে প্রিয়ঙ্কার বিয়ে হয় বিশ্বাস গুপ্তের। ১১ বছর দাম্পত্য করার পর আচমকাই দম্পতির জীবনে আবির্ভাব হয় রাম রহিমের।

প্রিয়ঙ্কা যতই রাম রহিমের কাছাকাছি আসতে থাকেন, ততই দূরত্ব বাড়তে থাকে স্বামী বিশ্বাসের সঙ্গে।

বিয়ের এক দশক এক বছর পর শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন হানিপ্রীত। পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন রাম রহিমের সঙ্গে। নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন, রাম রহিমের পালিত কন্যা হিসেবে।

বিশ্বাসের অভিযোগ ছিল, ২০১১-তে তিনি হাতেনাতে ধরে ফেলেছিলেন হানিপ্রীতকে। কী হয়েছিল সে দিন? বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, ‘আমি রাম রহিমের গুহায় গিয়েছিলাম।

আমি তখনই ওদের দু’জনকে যৌনতায় লিপ্ত হতে দেখে ফেলি। আমি যে জেনে ফেলেছি, সেটা জানার পর প্রিয়ঙ্কা (হানিপ্রীত) ও রাম রহিম দু’জনে মিলে আমাকে হুমকি দেন। বলা হয়, জানাজানি হলে আমার পরিবারকে খতম করে দেওয়া হবে। এর পরই আমি ডেরা ছেড়ে পালিয়ে আসি।’

কিন্তু হানিপ্রীত বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, বিশ্বাস হতাশায় এ সব বলছেন।

কার্যত একই অভিযোগ বিশ্বাসের বাবা মহেন্দ্রও করেছিলেন। ১৯৭০ থেকে মহেন্দ্র ডেরায় যাতায়াত করেন। কিন্তু এই ঘটনার পর তাঁরও ডেরায় যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

২০০২-এ সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতিকে গুলি করে খুন করা হয়। তার সংবাদপত্র ‘পুরা সচ্’ প্রকাশ করেছিল একটি চিঠি।

সেই চিঠিতে রাম রহিম কীভাবে তারই এক নারী শিষ্য যৌন নিগ্রহ করেছেন তার বর্ণনা ছিল। সেই ঘটনায় রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।

সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। শেষ পর্যন্ত বহু আইনি লড়াই পেরিয়ে দোষী সাব্যস্ত হন রাম রহিম।

রাম রহিমকে পালাতে সাহায্য করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তার পালিত কন্যা হানিপ্রীত ওরফে রুহদিকে।

আ/মাহাদী

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  

এক্সক্লুসিভ আরও