বরগুনায় শিশুদের মানসিক বিকাশে আনন্দমেলা
অক্টোবর ২৯ ২০২২, ১৯:১০
বরগুনা প্রতিনিধি॥ করোনা অতিক্রান্ত শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশের লক্ষ্যে বরগুনায় চলছে মাসব্যাপী শিশু আনন্দমেলা। সার্কিট হাউস-সংলগ্ন মাঠে শিশু আনন্দমেলার আয়োজন করেছে বরগুনা প্রেসক্লাব। শিশুদের ইচ্ছেমতো বিনোদনের জন্য নানা ধরনের খেলাধুলার আয়োজন রয়েছে মেলায়। প্রতিদিন শিশুদের নিয়ে মেলায় আসছেন অভিভাবকরা।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা অতিক্রান্ত শিশুদের জন্য এমন এক আয়োজন সময়োপযোগী ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের নিয়ে মেলায় আসা অভিভাবকরাও এমন আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
বরগুনার লবণগোলা এলাকার বাসিন্দা খালেদা আক্তার দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে শিশু আনন্দমেলায় এসেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই-তিন বছরে নাতিদের নিয়া যে ঘুরতে যাব এমন পরিবেশ কোথাও পাই নাই। শিশুমেলার কথা শুনে নাতিগো তাড়নায় মেলায় আসছি। এখানে আইসা ওরা ইচ্ছামতো খেলাধুলা করছে। মজার মজার খেলনা কিনছে। ওগো হাসিমুখ দেইখ্যা ভালো লাগছে।’
আয়োজক কর্তৃপক্ষ বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি সঞ্জীব দাস বলেন, ‘করেনা অতিক্রান্ত শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশের লক্ষ্যেই আমরা গত ৫ অক্টোবর বরগুনা সার্কিট হাউসের পাশে মাসব্যাপী শিশু আনন্দমেলার কার্যক্রম শুরু করি। প্রতিদিন বিকালে অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে মাঠে আসেন। শিশুরা নানা ধরনের রাইডসে চড়ে, ঘুরে বেড়ায়। পছন্দমতো খেলনা কিনে নিয়ে যায়। মেলার এক মাস শিশুদের অবাধ বিচরণ ও শরীরচর্চায় সুযোগ থাকছে। আমরা আশা করি এই মেলার মধ্য দিয়ে শিশুরা ভার্চুয়াল জগৎ ছেড়ে বাস্তবতায় ফিরে আসবে।’
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ বলেন, ‘আমরা এই প্রথম এ ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা করেছি। এখানে সাধারণ শিশুদের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ও পথশিশুদের বিনোদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে তাদের এ সুযোগ করে দিয়েছি শুধু মানবিক মূল্যবোধ থেকেই। এই মেলায় ১৫ ধরনের রাইড আছে। শিশু আনন্দমেলাটিতে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিনোদনপ্রেমী শিশু ও অভিভাবকদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্বে থাকা কর্মীরা।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন সিপিডিবির নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, করোনায় শিশু-কিশোররা দুই বছরেরও বেশি সময় গৃহবন্দি হয়ে ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে দিন-রাত সময় কাটিয়েছে। বেশিরভাগ শিশু ও অভিভাবকরা বলেছেন, পড়ার বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নেই বললেই চলে৷ লেখাপড়ায় মনোযোগ নেই আগের মতো৷ পুরো সময় কাটছে টিভি দেখে আর স্মার্ট ডিভাইসে৷ দিন-রাতের রুটিন বদলে গেছে৷ অনেকের আচরণে এসেছে পরিবর্তন৷ এমন পরিস্থিতিতে সন্তানদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরা৷
তিনি আরও বলেন, আমাদের জেলায় স্কুল ও কলেজেগুলোতে বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। এই অবস্থায় বরগুনা প্রেসক্লাব শিশু আনন্দ মেলার আয়োজন করেছে, যা সময়োপযোগী ও শিশুদের জন্য বিবেচনাপ্রসূত একটি সিদ্ধান্ত। আমরা মনে করি, গত দুই বছরে শিশুরা যে মানসিক ও শারীরিক বিকাশের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এক মাসে তা অনেক ডেভেলপ করবে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘করোনার দুই বছরে শিশুদের মারাত্মক কিছু ক্ষতি হয়েছে৷ এর মধ্যে মানসিক ক্ষতিটা অনেক বেশি৷ পাশাপাশি অনেক শিশু মোটা হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় শিশুদের উন্মুক্ত বিনোদনের বিকল্প নেই। শিশু আনন্দমেলা সত্যি একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। আয়োজকদের এমন চিন্তাকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি।’
ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রটেকশন স্পেশালিস্ট জামিলা আক্তার বলেন, ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরুর পর ইউনিসেফ শিশুদের নিয়ে একটা গবেষণা প্রকাশ করে৷ সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১৮৮টি দেশে লকডাউন বা অন্যান্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের কারণে ১০৬ কোটির বেশি শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গবেষণায় শিশুদেরকে ভার্চুয়াল জগৎ থেকে বের করে উন্মুক্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করার বিষয়ে জোর সুপারিশ করা হয়।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বরগুনা প্রেসক্লাবের আয়োজনে মাসব্যাপী শিশু আনন্দমেলায় আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। আশা করি এই মেলার মধ্য দিয়ে আমাদের করোনা অতিক্রান্ত শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ঘটবে।’
বরগুনার পুলিশ সুপার আবদুস সালাম বলেন, শিশু আনন্দমেলায় শিশুদের ও অভিভাবকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা শুরু থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে মেলার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আশা করি শান্তিপূর্ণভাবে মেলার কার্যক্রম শেষ হবে।