বছর চারেক আগে মৃত বিএনপি নেতার কারাদণ্ড
নভেম্বর ২১ ২০২৩, ২০:২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: রাজধানীতে নাশকতার অভিযোগে হওয়া পৃথক সাত মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ অঙ্গসংগঠনের ১৪০ জন নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে নিউমার্কেট থানার মামলায় মৃত বিএনপি নেতা মো. আবু তাহের দাইয়াকে সাজা দিয়েছেন আদালত। তিনি চার বছর আগে মারা গেছেন। সে সময় তিনি নিউমার্কেট থানার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। মৃত ব্যক্তিকে সাজা দেওয়ায় তার পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
এ বিষয়ে মৃত তাহেরের ছেলে এহসান সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা রাজনীতি করতেন। তিনি চার বছর আগে মারা গেছেন। মৃত বাবার সাজা হয়েছে—এটা শুনে খারাপ লাগল। মৃত ব্যক্তির সাজা হয়, এটা আমার জানা নেই। এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত।
আসামি পক্ষের আইনজীবী জাকির হোসেন জুয়েল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিউমার্কেট থানার মামলায় চার বছর আগে মৃত আবু তাহের দাইয়াকে সাজা দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বিএনপির হরতাল-অবরোধ চলাকালে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় মামলা হয়। এ মামলায় সাত নম্বর আসামি ছিলেন আবু তাহের। তদন্ত শেষে ওই বছরের ২১ জুলাই আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। বিচার চলাকালে চার বছর আগে দাইয়া মারা যান। বিচার শেষে আবু তাহের, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল এবং তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী
হেলাল, মৃত দাইয়াসহ ১৪ জনকে দেড় বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এ রায় দেন। এ সময় আদালতে আসামিদের পক্ষের কোনো আইনজীবী এবং আসামিরা উপস্থিত ছিলেন। এ কারণে ম্যাজিস্ট্রেট তাদের জামিন বাতিল করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে কারাদণ্ডের রায় দেন।
এ ছাড়া একই আদালত পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় পল্টন থানার মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সোহেল ও যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে দুই বছরের করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য বাকি আসামিরা হলেন—বিএনপির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সেক্রেটারি রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাবেক সেক্রেটারি আকরামুল হাসান মিন্টু, হাবিবুর রশিদ হাবিব ও যুবদল দক্ষিণের সভাপতি এনামুল হক এনাম।
এ ছাড়া অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ ১২ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের কাজে বাধা দান ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় পল্টন মডেল থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
সাত নেতাকর্মী আড়াই বছরের সাজা
২০১৩ সালে রাজধানীর তেজগাঁও থানার নাশকতার মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ বিএনপির ৭ কর্মীকে ২ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী এ রায় দেন। পাশাপাশি প্রত্যেককে ২ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে তাদের আরও সাত মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পুলিশের ওপর হামলায় ৬২ নেতাকর্মীর কারাদণ্ড
রাজধানীর বংশালে পুলিশের ওপর হামলা মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ৬২ নেতাকর্মীকে সাড়ে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ মামলার অন্যতম আসামি বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খন্দকার আখতার হামিদ খান পবন। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী এ রায় দেন।
ভাঙচুরের ঘটনায় ১৫ নেতাকর্মীর সাজা: ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে চকবাজার এলাকায় ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা মামলায় বিএনপির ১৫ নেতাকর্মীকে ২ বছর ৩ মাসের কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতাউল্লাহ এ রায় দেন।
নাশকতা মামলায় ১৬ নেতাকর্মীর সাজা
শাহজাহানপুর থানার নাশকতা মামলায় বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীর ২ বছর ৩ মাসের কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতাউল্লাহ এ রায় দেন।
এ ছাড়া ২০১৩ সালে দ্রুত বিচার আইনে পল্টন থানার মামলায় মেহেদী হাসান নামে এক বিএনপি কর্মীকে ২ বছরের কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহাবুব এ সাজা দেন।