বরগুনায় রোগী বহন না করেই অবহেলায় নিঃশেষ সরকারি নৌ অ্যাম্বুলেন্স
নভেম্বর ২০ ২০২৩, ১২:৩৪
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ঘূর্ণিঝড় সিডর পরবর্তী সময়ে উপকূলীয় জেলা বরগুনায় নৌপথে রোগী বহনের জন্য ২০০৮ সালে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করেছিল ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত একজন রোগীও বহন করতে পারেনি অ্যাম্বুলেন্সটি। ফলে সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকা গচ্ছার সাথে সাথে অযত্ন অবহেলায় নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি এখন নিঃশেষের পথে।
জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্র ও তথ্যমতে, ২০০৭ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে নৌপথে রোগী পরিবহনের জন্য ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি দেয় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। দীর্ঘদিন খাকদোন নদীর চরে ফেলে রাখার পর অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে নৌ অ্যম্বুলেন্সটির বর্তমান ঠিকানা হয়েছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতলের পুরনো ভবনের পূর্বপাশে পরিত্যক্ত স্থানে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেনারেল হাসপাতালের পেছনে ফেলে রাখা হয়েছে নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি। শূন্যলতা আর আগাছায় জরাজীর্ণ অ্যাম্বুলেন্সটির শুধু অবকাঠামোই টিকে আছে। ভেতরের ইঞ্জিন বা যন্ত্রপাতি কিছু নেই। নৌ অ্যম্বুলেন্সটির চালক আবদুর রহমান বলেন, এটি চালানোর জন্য কোনো চালক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সড়কপথের অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি আমাকে এটি চালানোর দায়িত্ব দেন। তবে এটিতে আমি এখন পর্যন্ত কোনো রোগীই পরিবহন করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, নৌ পথে বরগুনা থেকে বরিশাল যাওয়া আসায় জ্বালানিসহ ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ ধরা হলেও রোগীদের কেউ এ খরচ বহন করে আসতে চায় না। কারণ এই খরচের অর্ধেকেরও কমে সড়ক পথে রোগী পরিবহন করা যায়। সে কারণেই এটি অচল হয়ে পড়ে আছে। আর এর দুটি ইঞ্জিন হাসপাতালের ভান্ডারে রাখা হয়েছে।
জেনারেল হাসপাতালের ভান্ডার সংরক্ষক বদরুল আমিন বাদল বলেন, আমি গত ১৮ জুলাই এখানে যোগদান করেছি। তখন দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত ভান্ডার সংরক্ষক আল আমিন আমাকে ভান্ডারে সংরক্ষিত শুধু মাত্র ১৩ প্রকারের ওষুধের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। তাই ভান্ডারে নৌ অ্যম্বুলেন্স ও এর কোনো ইঞ্জিন সংরক্ষণের বিষয় আমার জানা নেই।
এ বিষয় হাসপাতালের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ভান্ডার সংরক্ষক অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. আল আমিন বলেন, নৌ অ্যম্বুলেন্সটির দুটি ইঞ্জিন হাসপাতালেই সংরক্ষিত আছে। তত্ত্বাবধায়ক স্যার জেলার বাইরে আছেন, তিনি এসে অনুমতি দিলে দেখানো যাবে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক লোকমান হাকিম বলেন, আমিও নতুন যোগদান করেছি। তবে যতদূর জানি, উপকূলীয় জেলা বিবেচনা করে নৌপথে রোগীদের সেবায় নৌ অ্যম্বুলেন্সটি দেওয়া হলেও খরচের কারণে রোগীরা যাতায়াত না করায় এটি অচল হয়ে পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়েছে। কয়েক বছর আগে নদী থেকে তুলে এনে নৌ অ্যাম্বুলেন্সটিকে জেনারেল হাসপাতালের মধ্যে রাখা হয়েছে।
নৌ-অ্যম্বুলেন্সটির ইঞ্জিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয় আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি জেনে জানাব ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. ফজলুল হক বলেন, জেনারেল হাসপাতালের কোনো কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে না। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কই এ বিষয় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।