‘রকেটে’র হুইসেলে এখন আর ঘুম ভাঙে না দক্ষিণের নদীপাড়ের মানুষের
অক্টোবর ২৮ ২০২২, ১৮:৪০
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বৃটিশ সরকার প্রথমে ১৪টি রকেট স্টিমার চালু করেছিল। যা পরিচালনা করতো রিভারস্টিম নেভিগেশন কোম্পানি। স্বাধীনতার পরে নারায়ণগঞ্জের পরিবর্তে ঢাকা থেকে চলাচল শুরু করে এ বিশাল জলযান।
তবে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী রকেট স্টিমার সার্ভিস। এখন পদ্মা সেতুকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে পুরো জাহাজ সার্ভিসটি বন্ধ করে দেয়া হলো।
বৃটিশ সরকার নারায়ণগঞ্জ বন্দর থেকে কোলকাতায় মালামাল ও মানুষের চলাচলের জন্য এ নৌযান চালু করেছিলো।
একসময় উপকূলীয় এলাকার নদ-নদী পাড়ের মানুষের ঘুম ভাঙত গাজী রকেট, পি এস টার্ন, পিএস লেপচা, পিএস অস্ট্রিচ, পিএস মাসুদ ও শহিদ বেলায়েতসহ রকেট স্টিমারগুলোর বিকট হুইসেলের শব্দে।
১৮৮৪ সাল থেকে বাষ্পীয় প্যাডেল হুইল জাহাজ বৃটিশ সরকার চালু করেছিল। আর তা চলতো নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর, বরিশাল হয়ে খুলনা পর্যন্ত।
স্টিমারগুলো খুলনা থেকে নারায়ণগঞ্জ যেতে তৎকালীন পিরোজপুর ও ঝালকাঠী মহাকুমার বুক চিরে কচা, সন্ধ্যা ও সুগন্ধা নদী থেকে যেতে রাত হতো।
নদীতে চলা ছোট ছোট মাছ ধরা নৌকা ও অন্য নৌযানগুলোকে সাবধান করতে স্টিমারগুলো যে হুইসেল বাজাতো তার শব্দে এ অঞ্চলের মানুষের ঘুম ভেঙে যেত।
একসময় এ অঞ্চলের মানুষ রকেট স্টিমারে কোলকাতা যেতেন। প্রবীণ মানুষের কাছে শোনা যেত ‘রকেটে’ চলাচলের স্মৃতি কথা।
এক সময়ের যাত্রীবান্ধব রকেট স্টিমার এক শ্রেণির কর্মকর্তার অবহেলা আর দায়সারা কাজের জন্য ধীরে ধীরে যাত্রীসেবার মান কমতে থাকায় যাত্রীদের রকেটে চলাচলের আগ্রহ কমে যায়।
করোনার সময় বিআইডব্লিউটিসি খরচ সাশ্রয়ী প্যাডেল স্টিমারগুলো বন্ধ করে রেখে তিনগুণ খরচ বেশি হয়- এমন নতুন দুটি স্টিমার চালু করে লোকসানের বোঝা ভারি করতে থাকে।
২০১৪ ও ২০১৫ সালে সংগ্রহ করা এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙ্গালী নামের এসব নৌযানের জ্বালানি খরচ প্যাডেল জাহাজগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
তারপরও নৌযান পরিচালনা সংস্থাটির এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব নৌযান যাত্রীবান্ধবও নয়।
অপরদিকে সাশ্রয়ী খরচের চারটি প্যাডেল জাহাজের মধ্যে পিএস অস্ট্রিসকে বিনা টেন্ডারে সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রীর নির্দেশে দীর্ঘ মেয়াদি ইজারা দেয়া হয়েছে।
অপর তিনটির মধ্যে পিএস লেপচা ও পিএস টার্ন দীর্ঘ দিন ধরেই নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের বাইরে রাখা হয়েছিলো
। পিএস মাসুদ রকেটটি প্রায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে মাঝারি ধরনের মেরামত করে এ বছরের শুরুতে যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত করেও তা প্রত্যাহার করা হয়।
পদ্মা সেতু চালুর তিন বছর আগেই বিআইডব্লিউটিসির একমাত্র অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস কার্যত বন্ধ ছিলো।
এ অঞ্চলের মানুষ বৃটিশ সরকারের আমল থেকে অভ্যন্তরীণ এ নৌযানের সুবিধা ভোগ করে থাকলেও আজ প্রায় দেড় শ’ বছরের স্মৃতি মুছে যাওয়ায় উপকূলবাসী ব্যাথিত।
তাদের স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেলো একটি ইতিহাস। তাদের এখন আর ‘রকেটে’র হুইসেলে ঘুম ভাঙে না।