কলাপাড়ায় লালচে পানিতে অস্বস্তি
নভেম্বর ০৯ ২০২২, ১৩:৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: রং নেই, গন্ধ নেই, স্বাদ নেই- পানিকে সংজ্ঞায়িত করা হয় এভাবেই। উপকূলীয় জনপদ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় যেন পানির সংজ্ঞাটাই বদলে গেছে। এখানকার পানিতে রং আছে, সেটা আবার গাঢ় লাল। কখনও কখনও তা কিছুটা আঠালো।
কলাপাড়ার প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নিয়মিত পান করছেন এমন পানি। পানি ব্যবহারে অস্বস্তি থাকলেও তাঁদের কোনো উপায়ও নেই।তবে কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে উন্নত শোধনযন্ত্র (ওয়াটার ফিল্টার) বসিয়েছেন। তাতেও লাল পানির ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলছে না।
এলাকার মানুষ অভিযোগ করেন, কলাপাড়ায় সরকারের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে পানির সমস্যা দূর করতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে বরিশাল আঞ্চলিক পরীক্ষাগার ও ঢাকার মহাখালীতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের গবেষণাগারে এই পানির পরীক্ষা করা হয়।
সেখান থেকে বলা হয়, পানির রং লালচে হলেও এটি ব্যবহার উপযোগী। এতে ক্ষতিকর কিছু নেই। এরপর উন্নত পরীক্ষার জন্য নমুনা সুইজারল্যান্ডের গবেষণাগারে পাঠানো হয়। তারা লিখিত প্রতিবেদন না দিলেও মৌখিকভাবে জানিয়েছে, পানিতে ক্ষতিকর কিছুর উপস্থিতি নেই।
কলাপাড়ায় সরেজমিন ঘুরে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলে পানি সমস্যার ভীতিকর ছবি উঠে আসে।
কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনা পারভীন সীমা বলেন, ‘বাধ্য হয়েই আমরা এ পানি পান করছি। শহরের প্রধান সমস্যাই হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।’
কলাপাড়া বাসস্ট্যান্ডের হোটেল কর্মচারী আব্দুল জলিল বলেন, ‘মনে হয় হলুদের মতো কোনো রং পানিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয় এটা আয়রনের কারণে হতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার সকালে শহরের একটি বাসার তত্ত্বাবধায়ক খলিলুর রহমান পানির ট্যাঙ্ক পরিস্কার করছিলেন। ট্যাঙ্ক থেকে হলুদ রঙের ঘোলাটে ময়লা পানি বেরিয়ে আসছিল।
জিজ্ঞাসা করতেই খলিলুর রহমান বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে এ ট্যাঙ্ক পরিস্কার করি, আবার আয়রনে ভরে যায়। শহরের সব বাসাবাড়িতে একই অবস্থা।’
পৌর শহরের বাসিন্দা মো. বশির উদ্দিন জানান, পৌরসভার পানি দিয়ে ভাত ও তরকারি রান্না করলে রং ও গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। আর গোসল করলে শরীর আঠালো এবং চুল বিবর্ণ হয়। শরীর চুলকায়।
পানিতে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে কাপড়চোপড় ভালোভাবে পরিস্কার করা যায় না। এ ছাড়া বাড়ির গোসলখানা বা শৌচাগারের টাইলস, বেসিন ও পানি সরবরাহের পাইপসহ অন্য সামগ্রী পরিস্কার রাখা যাচ্ছে না। সেগুলোতে লালচে দাগ পড়ে যায়।
গৃহবধূ আয়েশা আক্তার বলেন, পানিতে ফিটকিরি দেওয়ার পর নিচে ময়লার আস্তর জমে। বাসায় অতিথি এলে বোতলের পানি কিনে খাওয়াতে হয়।
এদিকে পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন ও ময়লার কারণে বিভিন্ন রোগবালাই ছড়াচ্ছে। আয়রনযুক্ত পানি ব্যবহার করে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে চুলকানি, পেটের পীড়া, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক ও মাথার চুল ঝরে পড়ার মতো সমস্যা হচ্ছে।
স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, কলাপাড়ায় অধিকাংশ মানুষই নিয়মিতি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খান। আমাশয় তো লেগেই আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদার জানান, খাল-বিলের পানি ব্যবহার করার কারণে আমাশয় ও ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা এখানে বেশি। তবে লালচে পানি পান করার কারণে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা তাঁর জানা নেই।
কলাপাড়া পৌরসভার সচিব মো. হুমায়ুন কবির জানান, পৌরবাসীর পানির চাহিদা পূরণে ২০০৫ সালে সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস অনার্স কলেজ মাঠে স্থাপন করা হয় ৫ লাখ লিটার ধারণক্ষমতার একটি ওভারহেড ট্যাঙ্ক।
এরপর নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ৭ লাখ লিটারের আরও একটি ওভারহেড ট্যাঙ্ক স্থাপন করা হয়েছে। এখান থেকেও নিয়মিত বের হচ্ছে লালচে পানি।
কলাপাড়ার পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘পৌর এলাকার প্রায় ২১ হাজার জনসংখ্যার পানির চাহিদা আমরা পূরণ করছি। তবে এখানকার নিচের মাটিই লালচে, তাই পানিও লালচে।
পানিতে কোনো সমস্যা নেই। শোধনযন্ত্র বসাতে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা লাগবে। এ যন্ত্রের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অর্থ সহায়তা চেয়েও পাওয়া যায়নি।’
আ/ মাহাদী