মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করল বিএনপি নেতা

নভেম্বর ০৯ ২০২২, ১১:১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: পঞ্চগড়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বীর নিবাস পেয়েছে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। তবে বাড়ির চারপাশে রাস্তা বন্ধ হওয়ার কারণে চলাফেরার সমস্যা হচ্ছে পরিবারটি।

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অভিযোগ- বিএনপির নেতারা দরজার সামনে দেওয়াল তুলে দিয়ে চলাচলে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।

বুধবার (৯ নভেম্বর) সকালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ বাজার সংলগ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জোহা নূর আহম্মদ বীর নিবাস থেকে এ তথ্য জানা যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা আবু জোহার বড় ছেলে সালাউদ্দিন বাবু তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন। কিন্তু তাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা নেই।

বীর নিবাসের সামনে ২০২২ সালের মার্চ মাসে ইটের দেওয়াল তুলেছে তিন বিএনপি নেতা। এরপর বালু ভরাট করার কারণে উঁচু হওয়ায় বর্তমানে বীর নিবাস থেকে বের হতে পারছে না পরিবারের সদস্যরা। দেওয়ালের সামান্য একটি ছোট দরজা দিয়ে বের হলেই বিএনপি নেতারা তাদের বাধা দেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৩ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা আবু জোহা কালিয়াগঞ্জ বাজার সংলগ্ন বাড়িতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।

বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গা দিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছিল যুগ যুগ ধরে। গত ২০১৮ সালে আবু জোহা মারা যায়। মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে সালাউদ্দিন বাবু সেই বাড়িতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করছিল।

এদিকে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সালাউদ্দিন বাবু বীর নিবাসের জন্য সমাজ সেবা অধিদপ্তরে আবেদন করলে, সরকার মুক্তিযোদ্ধার ওই বাড়িটি বীর নিবাসের জন্য মঞ্জুর করেন। বীর নিবাস নির্মিত হওয়ার পর থেকে শুরু হয় বিএনপি নেতাদের ষড়যন্ত্র।

ভুক্তভোগী পরিবারটি জানান, বীর নিবাসের সামনে ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ও ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী আকতার হোসেন ও তার জামাতা আরিফ হোসেন নিজেদের জায়গা দাবি করে বালুর স্তূপ করে রেখেছে। একই সঙ্গে গড়ে তুলেছে দেওয়াল।

অন্যদিকে বিএনপি নেতারা হুমকি দিচ্ছে পরিবারটিকে। যাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিএনপি নেতাদের জায়গা ব্যবহার না করি। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও বিষয়টি সমাধান হয়নি।

বীর নিবাসে বসবাসরত সালাউদ্দিন বাবু জানান, দীর্ঘদিন ধরে আমরা পাঁচ শতক জমির ওপর এই বাড়িতে বসবাস করছি। আমি নিজেও মুজিব আদর্শের সৈনিক।

কোন কারণ ছাড়াই আমার পরিবারের ওপর পূর্ব থেকেই ষড়যন্ত্র করে আসছিল ইউনিয়ন বিএনপি নেতারা। চলতি বছরে আমার বাবার নামে বীর নিবাস হওয়ার পর থেকে স্বাধীনতা বিরোধী কয়েকটি পরিবার আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে।

তিনি আরও জানান, আমার বাবা এ দেশের জন্য যুদ্ধ করে গেছেন। সরকার আমার বাবাকে বীর নিবাস করে দিয়েছেন। কিন্ত আমাদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, তাতে আমাদের মনে হয়। বীর নিবাসে থাকা হবে না।

এ নিয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে চলতি বছরের মার্চ মাসে লিখিত অভিযোগ করা হয়। গত ১০ মার্চ দুই পক্ষকে উপজেলা কার্যালয়ে নিয়ে বৈঠক হয়।

বৈঠকে আকতার হোসেন ও তার পরিবার বীর নিবাসের সামনে রাস্তার জন্য জায়গা দেওয়ার অঙ্গিকার করেন । কিন্তু পরবর্তীতে বীর নিবাসের সামনে আর জায়গা ছেড়ে দেননি।

অভিযুক্ত আরিফ হোসেন জানান, গত চার-পাঁচ বছর পূর্বে আমার শ্বশুর আমাকে ১৬ শতক জমি লিখে দিয়েছিল। আমাদের জমিতে আমরা দেওয়াল তুলেছি।

আমরা গলির মত রাস্তা করে দিতে চেয়েছিলাম কিন্ত তারা উল্টো আমাদেরকেই হুমকি দেয়। সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে আমাদের জায়গা দখল করে রাস্তা বানাতে চায়।

অভিযুক্ত ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আকতার হোসেন জানান, সালাউদ্দিন বাবু আমাদের আত্মীয়। তাদের চলাফেরায় অসুবিধার কথা না জানিয়ে বার হুমকি দেন তিনি। এ কারণেই এই সমস্যা সমাধান হয়নি।

কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মোমিন জানান আসলে মুক্তিযোদ্ধার ওই পরিবারটির চলাচল দ্রুত নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

তাছাড়া দেশের প্রত্যেকটি নাগরিককে স্বাধীনভাবে চলাফেরায় বাধা দেওয়া বেআইনি। তাদের চলাচলের রাস্তা নিশ্চিত করতে হবে।

তবে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও আকতার হোসেনের পরিবার জেদাজেদি পর্যায়ে গেছে। কোন পক্ষই ছাড়া দিতে নারাজ। যদি দুপক্ষই আমার কাছে সমাধানের জন্য আসেন, তাহলে বিষয়টি সমাধান করা হবে।

আ/ মাহাদী

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  

এক্সক্লুসিভ আরও