ওএমএসের চাল কিনতে দীর্ঘ লাইন

নভেম্বর ০৮ ২০২২, ০৯:২৪

অনলাইন ডেস্ক: প্রখর রৌদ্র। ওএমএসের ট্রাকের সামনে ভিড়। মানুষের দীর্ঘ লাইন। পাঁচ কেজি চালের আশায় দাঁড়িয়ে আছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব শাহনাজ বেগম। দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত চাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়। শাহনাজ বলেন, ‘৫ থেকে ৬ দিন আইছিলাম। ঘুইরা গেছি। আজকে সিরিয়ালে আছি। শেষ হইয়া গেছে।

এখন আর পামু না।’

শাহনাজ থাকেন ঢাকার দক্ষিণ মুগদা এলাকায়। তার দুই ছেলে। বড় ছেলের বয়স ২২ আর ছোট ছেলের ১২। মাকে ছেড়ে আলাদা থাকেন বড় ছেলে। শাহনাজ তার ছোট ছেলেকে নিয়ে ৪ হাজার টাকার একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তিনি বলেন, ফুটপাথে মাছ বিক্রি করি। প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। তা দিয়াই কোনো রকম খাইয়া বাইচা আছি।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শাহনাজ বেগমের মতো অসংখ্য মানুষের কষ্ট এখন সীমাহীন। দুটি পয়সা বাঁচানোর আশায় তারা ছুটছেন ট্রাকের পেছনে। কিন্তু তাতেও কোনো স্বস্তি নেই। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও সবার ভাগ্যে জোটে না ট্রাকের স্বল্প মূল্যের নিত্যপণ্যের। তাই এসব নিম্নআয়ের মানুষ কষ্ট নিয়েই বাড়ি ফেরেন। ট্রাকের মাধ্যমে ওএমএসের পণ্য কেনায় সুবিধাভোগীদের দুর্ভোগেরও শেষ নেই। প্রখর রৌদ্রে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে হয় তাদের। কেউ কেউ কোলে ছোট সন্তান নিয়েও আসেন। বৃদ্ধ কিংবা অসুস্থ মানুষও দাঁড়ান ওএমএসের লাইনে। ধাক্কা-ধাক্কি, বিশৃঙ্খলা কিংবা বাকবিতণ্ডায় জড়ান তারা।

তাদের মতো একজন আমেনা বেগম। ২০১৬ সালে তার স্বামী মারা গেছে। এখন এক সন্তানের সঙ্গে থাকেন। তিনি জানান, তার ছেলে ১০ হাজার টাকা বেতন পায়। মাসে ঘরভাড়া দেন ৫ হাজার টাকা। বাকি টাকা দিয়েই তার বাজার খরচ ও ওষুধ কিনতে হয়। এতে খুবই কষ্টে দিন যাচ্ছে তাদের। আমেনা বলেন, আমি তিনবার স্ট্রোক করেছি। হার্টে সমস্যা। ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার। আমাকে লাইনে ঢুকতে দেয় না। চালও দেয় না। দুই সপ্তাহ হইয়া গেছে আমারে পাঁচ কেজি চাল দিছে। এরপর একবার আইছিলাম। নিতে পারি নাই। এখন ঘরে চাল নাই। দেলোয়ার হোসেনও দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শেষে তিনিও চাল পেলেন না। দেলোয়ার বলেন, দুুপুর ১২ টার পর আসছি। দুই ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু এখন আর পামু না। সব শেষের দিকে।

মুগদা প্রধান সড়কে থাকা ওএমএসের ট্রাকের পাশে সকাল ১০টায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ফরিদা বেগম। তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর ৫ কেজি চাল ও ৪ কেজি আটা কিনেন তিনি। ফরিদা বলেন, ‘ধাক্কাধাক্কি কইরা চাল পাইছি। আরেকদিন আইতে দেরি হইছিলো পরে পাই নাই। তাই আজকে তাড়াতাড়ি আইছি। এই চাল দিয়া কয়েকদিন চইলা যাইব।’ ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘পাঁচ কেজি চাল কিনতে দিন শেষ। তাও কিনতে হইতাছে। কি করমু। গরিব মানুষ। যেই কয়টাকা বাঁচে তাই লাভ। এই টাকা দিয়া আলু কিন্না ভর্তা কইরা খাইতে পারলেও তো লাভ।’

ঢাকা রেশনিংয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ঢাকা মহানগরের মধ্যে ৫০টি ট্রাক সেলের মাধ্যমে চাল ও প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হয়। এই ৫০টি ট্রাকে ১০০ টন চাল, সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে দুই কেজি ওজনের ২৮ টন প্যাকেটজাত আটা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ ছাড়া ২২ টন সরকারি খোলা আটার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব চাল ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন ডিলাররা। আর দুই কেজি ওজনের প্যাকেট আটা ৪৩ টাকা ও খোলা আটা ১৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। ডিলাররা জানান, ট্রাকে ক্রেতাদের চাহিদার তুলনায় তাদের কাছে পণ্য কম থাকে। তাই সবার কাছে বিক্রি করতে পারেন না তারা। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ চাল-আটা কিনতে না পেরে ফিরে যান। গতকাল মুগদা প্রধান সড়কে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রি করা ডিলার নাজির আহমেদ বলেন, সকাল ১০টায় আসছি। ২টার মধ্যে সব শেষ হয়ে গেছে। অনেকেই না নিয়ে ফিরে গেছে। আমাদের কিছু করার নাই। যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ দেই। শেষ হয়ে গেলে চলে যাই।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  

এক্সক্লুসিভ আরও