বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এবং পাস ফেল

নভেম্বর ০৭ ২০২২, ২১:৪১

ডেস্ক প্রতিবেদক ‍॥ বাংলাদেশ গ্রুপে ছয় দলের মধ্যে চতুর্থ। জিতেছে দুটো ম্যাচ। হার তিনটিতে। তো এই পরীক্ষায় কি পাসমার্ক পাচ্ছে বাংলাদেশ? আসুন হিসেব মেলাই। কাদের বিরুদ্ধে জিতেছি আমরা? নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ে। এদের বিরুদ্ধে তো আমাদের জেতাই উচিত ছিল। এই দুই দলের বিরুদ্ধে তো আমরা জিতছি অনেকদিন ধরেই।

নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে তো সেই নব্বই দশক থেকেই জিতছি। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেও পেছনের ১০-১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের সাফল্য বেশ ধারাবাহিক। তো এমন ‘কমশক্তির’ দলের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে জেতা বাড়তি কোন সাফল্য হতে পারে না। চমক তো অবশ্যই না। এমন দুইদলের বিরুদ্ধে জয়ের আনন্দে সন্তোষের হাই তুললে বুঝতে হবে আপনার স্বপ্নের পরিধি খুবই ছোট। এদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যদি হেরে যেত তাহলে বরং সেটাই হতো বড় দুর্ঘটনা। এমন সমীকরণের ম্যাচে জিতে যদি গোটা দল আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুরে সুখ খুঁজে তাহলে মানতে হবে দলটা এখনো ‘বড়’ হয়ে উঠেনি!

তবে এই বিশ্বকাপ থেকে কিছুই যে পায়নি বাংলাদেশ তা কিন্তু নয়। ১৬ বছর পরে টি- টোয়েন্টি ক্রিকেটের মুল পর্বে দুটো ম্যাচ জিতেছে দল। এককভাবে কয়েকজন ক্রিকেটার সাফল্যের ঝলক দেখিয়েছেন। আমাদের বোলাররা এই বিশ্বকাপে প্রমাণ করেছেন যদি ভাল উইকেট পাওয়া যায়, ভালো কন্ডিশন মিলে তাহলে তারা বিদেশের মাটিতেও সাফল্য এনে দিতে পারেন। তাসকিন আহমেদের বোলিং বিশ্বমানের হয়েছে। যে দুই ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ তার দুটোতেই ম্যাচ সেরা তাসকিন। মুস্তাফিজুর রহমান তেমন উইকেট না পেলেও রান খরচায় ছিলেন দারুন মিতব্যায়ী। ৫ ম্যাচে তার বোলিং ইকোনোমি ৫.২০। প্রশংসীয় পারফরমেন্স। হাসান মাহমুদের বোলিং জানাচ্ছে সামনের সময় তিনিই হতে পারেন পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশের প্রাইম বোলার। ভারতের বিরুদ্ধে লিটন দাসের ২৭ বলে ৬০ রানের ইনিংস বিরাট কোহলির মতো ব্যাটসম্যানকেও মুগ্ধ করেছে। ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত দুটো হাফসেঞ্চুরি করেছেন। কিন্তু উইকেটে সেট হওয়ার পর দলকে যে জেতানোও যায়-এখনো সেই পর্যায়ের ব্যাটসম্যানশীপের ঘাটতি রয়েছে তার।

কিন্তু সার্বিকভাবে ব্যাটসম্যানরা যারপরনাই ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন এই বিশ্বকাপে। কয়েকজন তো একেবারে ডাঁহা ফেল। যা তা ব্যাটিং করেছেন। এই বিশ্বকাপে যদি আপনি আমাদের ব্যর্থতার ময়না তদন্ত করেন তাহলে রিপোর্টের বেশিরভাগ অংশ জুড়েই থাকবে ভাঙ্গাচোরা শোচনীয় ব্যাটিংয়ের চিত্র!

মিডলঅর্ডার ব্যাটিংয়ে ছিল সবচেয়ে বড় হতাশার। পুরো মিডলঅর্ডারই যেন ডিসঅর্ডার!  ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার তালিকা লম্বা। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ৫ ম্যাচে ৪৪ রান। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের গোটা বিশ্বকাপে মোট রান ৩৮। নুরুল হাসান সোহান ৫ ম্যাচ খেলে করলেন ৪১ রান। এর মধ্যে এক ম্যাচেই স্কোর তার ২৫। আফিফ হোসেন ৫ ম্যাচে মোটেও ৯৫ রান। ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় নাম ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলী। তিন ম্যাচে তার রান ৫। সর্বোচ্চ ৩! অথচ তিনি খেলছেন দলে স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যানের ট্যাগ গায়ে লাগিয়ে। দল হিসেবে ৫ ম্যাচে বাংলাদেশ ৯৬ ওভারে করেছে ৬৬৭ রান। আর ব্যয় করেছে ৯৪.১ ওভারে ৭৬৫ রান। সার্বিকভাবে রান আয়ের চেয়ে খরচা বেশি।

সামগ্রিকভাগে মিডলঅর্ডারে আমাদের যে ব্যর্থতা তারই যোগফল বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ে ছয়দলের মধ্যে আমরা পঞ্চম। এমনকি যে নেদারল্যান্ডসকে হারানোর মধ্যে আমরা সন্তুষ্ঠি খুঁজছি, সেই নেদারল্যান্ডসও পয়েন্ট তালিকায় আমাদের চেয়ে উপরে। এমন পারফরমেন্স নিয়ে যদি দলের কোচ বলেন যে আমাদের গর্ব করা উচিত। তাহলে বুঝতে হবে তিনি হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘তৈল’ গল্প অনেকবার পড়েছেন এবং রপ্তও করেছেন বেশ!

এই বিশ্বকাপকে যদি একটা দৌড় হিসেবে দেখেন তাহলে বাংলাদেশ সেই রেসের অর্ধেকরেখাও পার করতে পারেনি। ৫ ম্যাচে দুটি ম্যাচ জিতেছে আপাত ‘খর্বশক্তির’ ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরেছে বিশাল ব্যবধানে। ভারত এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জেতার সুযোগ ছিল। কিন্তু এই দুই ম্যাচে আমরা সুযোগটা হাত ধরে নষ্ট করেছি। এই দুটো ম্যাচের একটিও আমরা যদি জিততে পারতাম তাহলে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব একটা ভিন্ন বার্তা পেত। কিন্তু যে কায়দায় আমরা শেষ দুটো ম্যাচ হেরেছি তাতে আরেকবার প্রমাণিত টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ এখনো ফেল করা দল!

টি- টোয়েন্টির পৌরনীতি ও ধর্মশিক্ষায় পাস করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ইংরেজি, অংক ও বিজ্ঞানে ফেল!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  

এক্সক্লুসিভ আরও