ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ কী?
নভেম্বর ০৭ ২০২২, ০০:২৫
আমরা আজকে আমার বরিশালের স্বাস্থ্য বিভাগে আলোচনা করবো ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ কী ? তাহলে চলুন আর দেরি না করে উপরোক্ত বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। দিনে ক’বার প্রস্রাবের বেগ আসা স্বাভাবিক তা বলা কঠিন। অনেক ইউরোলজিস্ট জানান, দিনের বেলা আটবার ও রাতে ঘুমানোর সময় একবারের বেশি প্রস্রাবের বেগ আসলে তা অস্বাভাবিক হিসেবে ধরা যেতে পারে। প্রচুর পানি পান করলে দিনে ১০ বার পর্যন্ত প্রস্রাব হতে পারে।
বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দিনে ৬ থেকে ৮ বার প্রস্রাব করা স্বাভাবিক। উচ্চ রক্তচাপে ব্যবহৃত ডিউরেটিকসের মতো ওষুধ সচরাচরের তুলনায় বেশি প্রস্রাবের কারণ হতে পারে। আপনি সম্প্রতি কোনও ওষুধের ব্যবহার শুরু করার পর বারবার প্রস্রাব আসলে এর জন্য ওষুধটি দায়ী হতে পারে। ওষুধের ব্যবহার ছাড়াই ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্রস্রাব করতে হলে আপনি সম্ভবত কোনও স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। একজন পুরুষ হিসেবে আপনার প্রথম সন্দেহের বিষয় হতে পারে ডায়াবেটিস। কিন্তু না, যেসব পুরুষ ঘন ঘন প্রস্রাব করেন তাদের ৩০ শতাংশই অন্য একটি সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। সমস্যাটি হলো অতিক্রিয়াশীল মূত্রাশয়।
- আরো পড়ুন: কিডনি নষ্ট বোঝার উপায়
- আরো পড়ুন: পেট ব্যথা কমানোর উপায়
- আরো পড়ুন: পানি পানের উপকারিতা
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ কী ?
১. অতিক্রিয়াশীল মূত্রাশয়
ওভারঅ্যাক্টিভ ব্লাডার তথা অতিক্রিয়াশীল মূত্রাশয়ের (ওএবি) কারণে ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ আসতে পারে। এনওয়াইসি সার্জিক্যাল অ্যাসোসিয়েটসের চিকিৎসক কেরেম বোর্টিসেন বলেন, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী পুরুষদের মূত্রাশয় অতিক্রিয়াশীল হতে পারে, কিন্তু ষাটোর্ধ্ব পুরুষদের মধ্যে সমস্যাটির প্রাদুর্ভাব ৪ গুণ বেশি। যেসব পুরুষের প্রোস্টেট সমস্যা বা স্নায়ুতাত্ত্বিক রোগ (যেমন- স্ট্রোক ও মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস) আছে তাদের ওএবি’র ঝুঁকি বেশি।
মূত্রাশয় অতিক্রিয়াশীল হলে ঠিক কি ঘটে? যখন কেউ ওএবিতে ভুগেন তার প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়। নিউ ইয়র্ক সিটির ইন্টারনিস্ট সুনিথা পোসিনা বলেন, মূত্রাশয় অতিরিক্ত কাজ করলে হঠাৎ করে প্রস্রাবের শক্তিশালী বেগ আসে, যা ধরে রাখা অসম্ভব এবং বাথরুমে যেতে বিলম্ব হলে প্যান্টও ভিজে যেতে পারে। ডা. বোর্টিসেন বলেন, ওএবি’র পুরুষেরা রাতে প্রস্রাব করতে ঘনঘন বিছানা ছাড়েন। মূত্রাশয় পেশির ঘনঘন সংকোচন থেকে প্রস্রাব করার জন্য হঠাৎ শক্তিশালী তাড়না আসে, এমনকি মূত্রাশয় পূর্ণ না হলেও।
২. মূত্রতন্ত্রে সংক্রমণ
এটা সত্য যে নারীদের মূত্রতন্ত্রে সংক্রমণ বেশি হয়, কিন্তু এটাও মনে রাখা উচিত যে পুরুষেরাও মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণে ভুগতে পারেন। অরলান্ডো হেলথের ইউরোলজিস্ট জেমিন ব্রামবাট জানান, মূত্রনালীর সংক্রমণে অতিক্রিয়াশীল মূত্রাশয়ের মতো উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। তিনি আরো বলেন, অধিকাংশ পুরুষেরই প্রস্রাব চেপে রাখার কারণে মূত্রাশয়ে সংক্রমণ হয়ে থাকে।
এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য, মূত্রনালীতে সাম্প্রতিক অস্ত্রোপচার, কিডনি পাথর ও সমকামিতার কারণেও পুরুষদের মূত্রতন্ত্রে সংক্রমণ হতে পারে। যেসব পুরুষের মূত্রনালী ছোট তাদের মূত্রতান্ত্রিক সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। তিনি আরো জানান, ‘পায়ুপথে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া (প্রধানত ই. কোলাই) থাকে। কেউ সমকামে লিপ্ত হলে অথবা স্ত্রীর পায়ুপথে সেক্স করলে তার মূত্রনালীতে এসব জীবাণু ঢুকে সংক্রমণ সৃষ্টি করবে। সংক্রমণে মূত্রাশয় ও মূত্রাশয়ের প্রাচীর উক্ত্যক্ত হয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রস্রাবের বেগ আসে।
৩. ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস
ডা. বোর্টিসেন বলেন, পেইনফুল ব্লাডার সিন্ড্রোম নামেও পরিচিত ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা যা ঘনঘন প্রস্রাব, মূত্রাশয়ে চাপ ও ব্যথার কারণ হতে পারে। মূত্রতান্ত্রিক সংক্রমণের চিকিৎসা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সহজে করা গেলেও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস সহজে নিরাময় হয় না।
ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিসে ঘনঘন প্রস্রাবের তাড়না আসে যেটাকে অগ্রাহ্য করা কঠিন। সাধারণত প্রস্রাবের পরিমাণ অল্প হয়। প্রস্রাবের উক্ত্যক্তকারী পদার্থের কারণে মূত্রাশয়ে ইমিউন রিয়্যাকশন ঘটলে সমস্যাটির উৎপত্তি হয় যার ফলে মূত্রাশয়ে ড্যামেজ হয়, প্রস্রাব করার প্রবণতা বাড়ে ও মূত্রাশয়ে ব্যথা করতে পারে।
৪. ডায়াবেটিস
এনওয়াইসি সার্জিক্যাল অ্যাসোসিয়েটসের চিকিৎসক ক্রিস্টোফার হলিংসওয়র্থ বলেন, প্রায়ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের একটি প্রাথমিক উপসর্গ হলো ঘনঘন প্রস্রাব করা, কারণ শরীর প্রস্রাবের মাধ্যমে অব্যবহৃত শর্করা বের করে দিতে প্রচেষ্টা চালায়। ডায়াবেটিস রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে কিডনির শর্করা ব্যবস্থাপনার কাজ বেড়ে যায়।
কিন্তু কিডনি একাজে ব্যর্থ হলে বাড়তি শর্করাকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। ঘনঘন প্রস্রাব করার কারণে শরীর তরল হারায়। তাই শরীর টিস্যুর তরল ব্যবহার করে ডায়াবেটিস রোগীকে পানিশূন্যতায় ভোগায়। শরীর পানিশূন্যতায় ভুগে বলে ঘনঘন পিপাসা লাগে। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা শুরুর দিকে সচরাচরের চেয়ে বেশি পান করেন। একারণেও প্রস্রাব করার হার বেড়ে যায়।
৫. বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপারপ্লাসিয়া
ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসছে, কিন্তু প্রস্রাবের প্রবাহ আগের মতো শক্তিশালী না হলে এর সঙ্গে বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপারপ্লাসিয়া বা এনলার্জড প্রোস্টেট নামক প্রোস্টেট সমস্যার যোগসূত্র থাকতে পারে। ডা. হলিংসওয়র্থ বলেন, প্রথমদিকে আপনি লক্ষ্য করবেন যে প্রস্রাবের প্রবাহ কমে গেছে এবং সচরাচরের মতো শক্তিশালী নয়। এছাড়া প্রস্রাবে ভরা মূত্রাশয় খালি হতে দীর্ঘসময় লাগতে পারে এটা মূত্রাশয়ের পেশিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
সময়ের আবর্তনে মূত্রাশয় আরো ফেঁপে যায় ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি আরও জানান, এই সমস্যা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলে প্রস্রাব করা কঠিন হতে পারে। এটাও ঘনঘন প্রস্রাব করার মতো খারাপ খবর। তবে রোগীদের জন্য ভালো খবরও আছে। আলফা-ব্লকার, অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যামিট্রিপ্টাইলিন ব্যবহারে কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। রোগীরা প্রোস্টেট আর্টারি এম্বোলাইজেশনও চেষ্টা করতে পারেন। এটা হলো ননইনভেসিভ প্রসিডিউর যা বর্ধিত প্রোস্টেট গ্রন্থিকে সংকুচিত করতে পারে। তবে এটা নিরাপদ ও কার্যকর হলেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, যেমন: প্রস্রাবে রক্ত, বীর্যে রক্ত ও মূত্রাশয়ে ব্যথা।
৬. মূত্রাশয় ক্যানসার
ডা. ব্রামবাট বলেন, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ বিরলক্ষেত্রে মূত্রাশয় ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে। ক্যানসারটি মূত্রাশয়কে উক্ত্যক্ত করে প্রস্রাবের তাড়না বাড়াতে পারে। মূত্রাশয়ে ক্যানসার হয়েছে কি হয়নি তা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হলো ইউরোলজিস্টের কাছে যাওয়া। কিন্তু বারবার প্রস্রাব হলে ক্যানসার হয়েছে সন্দেহে আতঙ্কিত হবেন না, কারণ মূত্রাশয়ে ক্যানসার হওয়ার ঘটনা খুবই কম দেখা গেছে। ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ আসলে মূত্রাশয় ক্যানসারের অন্যকোনো উপসর্গ আছে কিনা দেখুন। এই ক্যানসারের আরেকটি লক্ষণীয় উপসর্গ হলো প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি।
৭. স্ট্রোক
ঘনঘন প্রস্রাবের আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হলো স্ট্রোক। স্ট্রোকের বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে ঘনঘন প্রস্রাব আসতে পারে। এ প্রসঙ্গে ডা. ব্রামবাট বলেন, কখনো কখনো পুরুষদের স্ট্রোক হলে মূত্রাশয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এটা বারবার প্রস্রাবের বেগ সৃষ্টি করতে পারে। অথবা এর বিপরীতটাও ঘটতে পারে, অর্থাৎ মূত্রাশয়ে প্রস্রাব জমে থাকতে পারে।
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন ফেইজবুক পেইজে এখানে ক্লিক করে।
আমার বরিশাল/ আরএইচ