পরিবহন বন্ধে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বরিশাল
নভেম্বর ০৪ ২০২২, ০৯:৫৩
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন বরিশাল বিভাগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পরিবহন। মহাসড়কে তিন চাকার অবৈধ যান ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বন্ধের দাবির কথা বলেছে এই ধর্মঘট ডেকেছে বাসমালিকদের সংগঠন বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপ।
শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘট চলবে সমাবেশের দিন আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ধর্মঘটের কারণে বরিশাল থেকে কোনো রুটে বাস ছাড়ছে না। বাস ছাড়াও ভোলা থেকে বরিশাল রুটে স্পিডবোট ও লঞ্চ চলাচলও বন্ধ থাকায় সারাদেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বরিশাল।
শুক্রবার সকাল ছয়টার পর বরিশাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বাস না পেয়ে অনেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। পরিবহন বন্ধ থাকায় মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। বিকল্প উপায়ে কেউ ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে গেলেও তাতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
বরিশাল বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বাসের টিকিট কাউন্টারগুলো বন্ধ। স্ট্যান্ডে সব বাস সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে।
শনিবার বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জেলা বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে। সমাবেশের আগের দিন বাস বন্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ দলটির নেতাকর্মীরা। পরিবহন বন্ধের জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, গণসমাবেশের যেন মানুষ আসতে না পারে সেজন্য সরকার এমন কাজ করেছে। তবে সরকার সংশ্লিষ্টদের দাবি, এতে সরকারের কোনো হাত নেই।
বাস বন্ধের বিষয়টি জানার পরও যাদের খুবই জরুরি কাজ ছিল তাদের অনেককে বরিশাল বাস টার্মিনালে আসতে দেখা যায়। তাদেরই একজন হাবিব। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাবিব বলেন, বাস বন্ধের বিষয়টি আগেই জেনেছি। তারপরও দুই দিন আগে জরুরি কাজে এসেছি। ছয়টার আগে টার্মিনালে এসেছি বাস পাব ভেবে। কিন্তু এসে দেখি কোনো বাসই ছাড়ছে না। এখন বিকল্প উপায়ে হলেও যেতে হবে।
এদিকে বিএনপর গণসমাবেশ ঘিরে বৃহস্পতিবার থেকেই দলটির অনেক নেতাকর্মী বরিশালে এসেছেন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে সমাবেশস্থলে। গতরাতে প্যান্ডেল টানিয়ে সমাবেশস্থলে আড্ডা, হই-হুল্লোড় করেন তারা।
নেতাকর্মীরা বলছেন, সমাবেশ যেন সফল না হয় সেজন্য শুক্রবার থেকে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আগেভাগেই তারা সমাবেশস্থলে চলে এসেছেন। সমাবেশের আগের দুই রাত এখানেই কাটাবেন।
গতকালও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা বরিশাল নগরীতে আসতে দেখা যায়। মিছিল নিয়ে তারা সন্ধ্যার পর থেকে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জড়ো হন।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন, রাতে উদ্যানেই ঘুমান দূর থেকে আসা নেতাকর্মীরা। কারণ আবাসিক হোটেলগুলোতে পুলিশ অভিযানের নামে তাদের হয়রানি করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘সব ধরণের পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে সরকার আমাদের সমাবেশ ঠেকাতে। তবে তাদের কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। জনগণের জন্য আন্দোলনে সব বাধা অতিক্রম করে দুই দিন আগেই সমাবেশস্থলে হাজির হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এখানেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে ত্রিপল টানিয়ে।
গত ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে কর্মসূচির দিন ধর্মঘট ডাকা না হলেও বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে বাধা দেন। এরপর খুলনায়ও ২২ অক্টোবর কর্মসূচির দুই দিন আগে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সমাবেশমুখী লোকজনকে ঠেকাতে কিছু জায়গায় বাধা ও হামলার অভিযোগ ছিল।
২৯ অক্টোবর রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুই দিন বাস বন্ধ ছিল।