ভোলা/ বিষপানের আগে ডায়েরিতে যে ‘কথা’ লিখেছেন রত্না
নভেম্বর ০৩ ২০২২, ১৩:৩৫
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যাতে পরপারে ভালো থাকতে পারি। সবার মতো আমি ও সুন্দর একটা জীবন নিয়ে সংসার করতে চেয়েছি।
কিন্তু এ সমাজ আমাকে বেঁচে থাকতে দিল না। মিথ্যা কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে সমাজে মুখ দেখাতে ইচ্ছা করে না।
বাবা-মা স্বামীর সম্মানের দিকে তাকিয়ে কখনো কোনো পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলি নাই, নিজের চরিত্রকে খারাপ করি নাই। কিন্তু আজ আমি চুরি না করেও চোর সবার মুখে মুখে।
আত্মহত্যার আগে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অনেক যন্ত্রণা আর অপবাদ লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে নিজের হাতে ডায়েরির পাতায় এমন কষ্টের কথাগুলো লিখে গেছেন গৃহবধূ রত্না।
রোববার রাতে মোবাইল ও স্বর্ণের চেইন চুরির অপবাদ সইতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যা করেন জান্নাতুল ফেরদৌস রত্না।
ঘটনাটি ঘটেছে ভোলার লালমোহনের চরভূতা ইউনিয়নে। গৃহবধূ রত্না চরভূতা ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মাহাবুব চৌকিদার বাড়ির মো. লিটনের স্ত্রী।
বুধবার নিশ্চিত করেছেন লালমোহন থানার ওসি মো. মাহাবুবুর রহমান। রত্নার বাবা আবুল কাশেম জানান, তার মেয়ে স্বামী বাড়িতে সুখেই ছিল। জামাই লিটন তার আপন ভাগনে হয়।
কিন্তু কিছুদিন আগে রত্নার চাচাশ্বশুর হাফিজুর রহমান তার পরিবার নিয়ে ভারত থেকে ওই বাড়িতে বেড়াতে আসে। তিনি নিজেদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালঙ্কার রত্নার কাছে জমা রাখেন।
ওই ঘর থেকে একটি স্বর্ণের চেইন ও মোবাইল ফোন চুরি হয়। এই চুরির অপবাদ রত্নার ওপর দেন চাচাশ্বশুর।
তিনি আরো জানান, তার মেয়েকে চুরির অপবাদ দিয়ে কয়েকদিন পর্যন্ত মানসিকভাবে অত্যাচার করে তার চাচাশ্বশুর ও বাড়ির লোকজন। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে বিষপান করে রত্না।
মৃত্যুর আগে রত্না তার কষ্টের কথাগুলো লিখে গেছেন ডায়েরির নোটে। রত্না লেখেন, ‘বাবা আমার অনুরোধ আমার স্বামীকে বাদে বাকি কাউরে ছাড় দিবা না, ওরা সবাই মিথ্যাবাদী। আমার চাচাশ্বশুর ওরা সবাই নাটের গুরু।
ওরা সবাই আমার নামে মিথ্যা অপবাদ রটাইছে। আমি কতটা বিশ্বাসী আর সৎ ছিলাম সেটা আমার আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
একটা মানুষের জীবন ছাড়া প্রিয় আর কি হতে পারে! আমি আমার জীবনের বিনিময়ে বলছি আমি চুরি করি নাই।এখন তোরা খুশি, সবাই খুশিই থাক। আমি চলে গেলাম। কেউ আর তোদের সঙ্গে সত্যের প্রতিবাদ করবে না।
আর বেশি কিছু লিখলাম না। অনেক কথা বলার ছিল সমাজকে, এই সমাজে ভালো মানুষের মূল্য নাই। সবার কাছে একটা অনুরোধ রইল আমার মেয়ে দুটিকে দেখিয়েন। ওদের জন্য আমার কতটা কষ্ট হয় বলে বোঝাতে পারবো না।
মা ছাড়া কতটা অবহেলিত সন্তান সেটা যার মা নাই সেই বুঝে। বাবা-মা পারলে ওদের খেয়াল নিও, না পারলে জোর নাই।’
রত্নার স্বামী লিটন বলেন, আমার স্ত্রীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার চাচারা অনেক গালিগালাজ করেছে। তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে। আমি এর বিচার চাই। ওসি মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। রত্নার মরদেহ ময়নাতদন্ত করে আনা হয়েছে।
প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর একটি মামলা করা হয়েছে।