সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ১১ দিন ধরে নিখোঁজ ভোলার ১৬ জেলে
নভেম্বর ০২ ২০২২, ১৩:৩৫
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞাকে উপক্ষে করে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ১১দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন ভোলার দৌলতখানের ১৬ জেলে।
মা ইলিশ রক্ষার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ের শেষ দিকে এসে ভোলার চরফ্যাসনের সমরাজ ঘাট থেকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরে মাছ ধরতে যায় নাছির উদ্দিন খান মালিকানাধিন ‘খান মৎস ভাণ্ডার’ নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার।
২১ জন জেলেকে নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ট্রলারে তলা ফেটে ১১ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন ভোলার দৌলতখানের ১৬ জেলে। বাকি পাচঁজনকে অন্য আরেকটি ট্রলার উদ্ধার করেছে বলে জানান উদ্ধার হওয়া জেলেরা।
জেলে পরিবারের স্বজনা বলছেন, জাল বোনার কথা বলে ট্রলার মালিক নাছির উদ্দিন খানের ভাই নেছার উদ্দিন দৌলতখানের চরপাতা থেকে ১৮ জন জেলেকে সামরাজ ঘাটে নেন।
কথা ছিলো অভিযানের পরে সাগরে মাছ ধরতে যাবে। কিন্তু ট্রলার মালিক তাদেরকে ভয় দেখিয়ে জোড় করে সাগরে মাছ ধরতে পাঠান।
দীর্ঘ ১১ দিনেও ফিরে না আসায় পরিবারের স্বজনরা এখন স্বজন হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। প্রিয়জনকে ফিরে পেতে অপেক্ষা করছেন স্বজন হারানো বাবা, স্ত্রী, ভাইরা। তাই তো নিখোঁজদের জীবত অথবা মৃত অবস্থায় ফিরে পেতে চাচ্ছেন সরকারের সহায়তা।
নিখোঁজ জেলে পরিবারগুলোর অভিযোগ, বৈরী আবহাওয়ায় ইলিশ ধরারলোভে জোর করেই জেলেদের সাগরে পাঠায় ট্রলার মালিক।
নিখোঁজ ১৬ জনের মধ্যে উপজেলার চরপাতা গ্রামের নুরে আলমের ঘরে এসেছে নতুন অতিথি। মাত্র ১১ দিন বয়সেও বাবার মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়নি তার। স্বামী-সন্ধান না পেয়ে থামছে না হাজেরা বিবির বিলাপ। বাবার পথ চেয়ে অপেক্ষায় রয়েছে তার আরো তিন সন্তান।
একইভাবে নিখোঁজ প্রতিবেশী মহসিন। তার স্ত্রী রানু বিবির অবস্থাও পাগল প্রায়। শরীফের স্ত্রী মারজান বেগমও দেড় মাসের বাচ্চা নিয়ে দিশেহারা। তাদের মতো নিখোঁজ আরো ১৪ জেলের পরিবারেও নেমেছে বিষাদের ছায়া।
নিখোঁজ মহসিনের স্ত্রী স্বামী শোকে বার বার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় আমি তাকে (মহসিন স্বামী) যেতে না বলছি।
তিনি আমাকে জাল বুনতে যাওয়ার কথা বলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে এখন নিখোঁজ। এখন কে আমাগোরে দেখবো বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।’
নিখোঁজ ইয়াছিন মাঝির ছেলে মো: জুয়েল বলেন, ‘আমার বাবা যাওয়ার আগে আমার মাকে বলছে জাল বুনতে যাই। জাল বুনা পরে অভিযান শেষে সাগরে মাছ ধরতে যাইবো।
যাওয়ার পরে ট্রলারের মালিক নাছির উদ্দিন খানের চাপে পইরা সকল জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যান। এখন ১১ দিন ধরে আমার বাবাসহ ১৬ জন জেলে নিখোঁজ। এখন আমাদের একটাই চাওয়া আমার বাবাকে জীবিত অথবা মৃত হলেও ফিরে পেতে চাই।
তিনি আরো বলেন, ট্রলার মালিক নাছির উদ্দিন এই নিখোঁজের জন্য দায়ী। তাকেই এর দায়ভার নিতে হবে।
ট্রলার মালিক মালিক নাছির উদ্দিন খান বলেন, আমার কাছ থেকে ট্রলার মাঝি দুলাল ভাড়া করে ট্রলারটি মাছ ধরার জন্য নিয়েছে। ইতোমধ্যে নিখোঁজ জেলেদের বিভিন্ন জায়গার খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, ‘নিখোঁজ হওয়া জেলেদের কারো খবর জানা যায়নি। নিখোঁজ জেলেদের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ এলে আমরা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেব।’
ভোলার দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, ‘নিখোঁজ ১৬ জেলে পরিবার দৌলতখান থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন। তারই আলোকে নিখোঁজদের সন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
আ/ মাহাদী