ঘটের খাঁড়া বরিশালে, রংপুরে তৎপর পুলিশ

অক্টোবর ২৭ ২০২২, ০৯:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে ওই সমাবেশের আগের দিন থেকে দুই দিনের বাস ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩ নভেম্বরের মধ্যে মহাসড়ক থেকে ‘তিন চাকার যানবাহন বন্ধ’ করা না হলে ৪ ও ৫ নভেম্বর ধর্মঘট পালন করবে বাস-মালিকদের সংগঠন বরিশাল বাস মালিক গ্রুপ। আগামী ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হওয়ার কথা। এর আগে ময়মনসিংহ ও খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরেও একই কায়দায় পরিবহন ধর্মঘট করা হয়েছিল।

বরিশাল বিএনপির নেতারা বলছেন, গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে ধর্মঘট করাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ বলেছে, সমাবেশে বাধা নয় বরং সহযোগিতা করা হচ্ছে।

রংপুরে ২৯ অক্টোবর বিভাগীয় গণসমাবেশ বিএনপির। মৌখিকভাবে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ায় গতকাল বুধবার থেকে নগরীর কালেক্টরেট ঈদগাহে প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল দুপুরে মাঠে গিয়ে কাজ তদারকি করতে দেখা যায় রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুসহ স্থানীয় নেতাদের। সেখানে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার খুলনা-ময়মনসিংহের মতো রংপুরেও বাস বন্ধ করে দেবে। আমরা তার জন্য বিকল্প পথ চিন্তা করেছি। যতই চেষ্টা করুক সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’ তিনি দাবি করেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে পুলিশ। তারা ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নুরে আলম মিনা গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিএনপি গণতান্ত্রিকভাবে সমাবেশ করবে। এর আগেও তারা সমাবেশ করেছে। আমরা তাদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছি। সমাবেশ ঘিরে যাতে কোনো ধরনের সহিংসতা না ঘটে, সে জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হবে।’
বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশের আগের দিন থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাস মালিক গ্রুপ। তারা সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবিতে এরই মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে। ২৪ অক্টোবর পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর বিভাগের ছয় জেলায় বাস ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহনসহ অনুমোদনহীন নছিমন-করিমন ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ করার দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করেছে বাস মালিক গ্রুপ।

বরিশাল বিএনপির দাবি, ৫ নভেম্বর বরিশালে তাদের বিভাগীয় গণসমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম ঠেকাতে ময়মনসিংহ ও খুলনার মতো বরিশালেও সব ধরনের যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হবে ক্ষমতাসীনদের ইশারায়।

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি কিশোর কুমার দে বলেছেন, প্রশাসন তাঁদের দাবি না মানলে ৪ ও ৫ নভেম্বর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল থেকে সব রুটে বাস ও মিনিবাসসহ আঞ্চলিক ও দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। তিনি দাবি করেন, বিএনপির সমাবেশের কথা তাঁদের জানা নেই। তাঁদের এই সিদ্ধান্ত অনেক আগের। এর সঙ্গে বিএনপির কর্মসূচি কিংবা সরকারের কোনো যোগসূত্র নেই।

বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন বাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাস মালিক গ্রুপ সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবিতে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিয়েছে। দাবি মানা না হলে ৪ নভেম্বর থেকে ধর্মঘট চলবে। শ্রমিক ইউনিয়ন এ ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছে।

বিএনপির অভিযোগ, আগামী ৫ নভেম্বরের গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে ক্ষমতাসীন দল বাস, লঞ্চ, খেয়া বন্ধ করে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তবে দলের নেতারা মনে করেন, মানুষ সাঁতরে কিংবা হেঁটে হলেও সমাবেশে আসবে।

বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, সমাবেশে লোকজন যাতে না আসতে পারে সে জন্য পরিবহন বন্ধ করার পাঁয়তারা করছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ওইসব চালাকিতে কাজ হবে না। বিএনপির গণসমাবেশ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের নেই। সাঁতরে হলেও মানুষ সমাবেশে আসবে। ৫ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে গণসমাবেশ হবেই।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘অনেক আগে থেকে বরিশালে গণসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। বাস মালিক গ্রুপ বিভাগীয় কমিশনারকে ধর্মঘটের আলটিমেটাম দিয়ে যে চিঠি দিয়েছে তা উদ্দেশ্যমূলক। বিএনপির সমাবেশে যাতে মানুষ না আসতে পারে এ জন্য সরকার এমন পরিকল্পনা নিচ্ছে। বাস মালিক সমিতিও সরকারের একটি অংশ। খুলনা, ময়মনসিংহেও একই অবস্থা করেছে, বরিশালে তাই ব্যতিক্রম দেখছি না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু বলেন, ‘বিএনপির উদ্দেশে বলি, চলার পথে ডাব মাথায় পড়লে যেন আওয়ামী লীগকে দায়ী না করা হয়। বাস মালিক তো আওয়ামী লীগের না। বিএনপির কাজই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। শান্ত বরিশালকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে তারা। জনসভায় আসার জন্য যদি বাস, লঞ্চে তারা ভাড়া না দেয় তাহলে মালিকরা উঠতে বাধা দিতেই পারে। বরিশালে আওয়ামী লীগের ওই দিন কোনো কর্মসূচি নেই। তবে নগরে বিশৃঙ্খলা করলে আওয়ামী লীগ জনগণের স্বার্থে যা করার তাই করবে।’

নানা সূত্রে জানা গেছে, ৪ ও ৫ নভেম্বর ট্রাক-লঞ্চ এমনকি খেয়াঘাটও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।তবে এ বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, ‘আমরা লঞ্চ চলাচল বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নিইনি। এমন কিছু থাকলে সবার আগে আমি জানতাম।’

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আমাদের ফেসবুক পাতা

আজকের আবহাওয়া

পুরাতন সংবাদ খুঁজুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  

এক্সক্লুসিভ আরও