হরিণঘাটার সবুজে একদিন
অক্টোবর ২৭ ২০২২, ০৯:১১
ডেস্ক প্রতিবেদক: সবুজ চিরল পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের উঁকি, এক ডাল থেকে আরেক ডালে বানরের লাফিয়ে যাওয়া কিংবা পথঘাটে মায়াবী চোখের হরিণের বিচরণ। সবুজ বনের পথে হাজারো পাখির কিচিরমিচির শব্দ! ঠিক কল্পনা নয়। জীবন এখানে এমনই। বলছি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্রের কথা। পাথরঘাটা থেকে সাত কিলোমিটার দূরে এ বনাঞ্চলের অবস্থান। এ সবুজ বনে কোনো বাঘ নেই। আছে শত শত নাম না-জানা গাছ। আছে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী।
এখানে সহজেই বন্যপ্রাণী চোখে পড়ে। বনের সবুজে মুগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি মুগ্ধ হবেন সাগরের হাতছানিতে। কেননা, হরিণঘাটা বনের কাছ দিয়ে বয়ে চলা বলেশ্বর, বিষখালী ও পায়রা নদী বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। এ দর্শনীয় স্থানটি থেকে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্য। নদী আর সাগরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার সঙ্গে দেখতে পাবেন বিশাল ঝাউবন। এ যেন একের ভেতর দুই। বন দেখার পাশাপাশি সাগরও দেখা হবে। বিশাল এই জায়গাজুড়ে রয়েছে শুধু নীরবতা ও পাখির কলরব। নীরবতার মধ্যে পাখির ডাক ক্ষণিকের জন্য ভুলিয়ে দেবে সব ধরনের যান্ত্রিক কোলাহল ও কর্মব্যস্ততা।
অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রের তুলনায় এখানে মানুষের ভিড় কম। আর তাই হয়তো এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির নির্বিঘ্নে বিচরণ চোখে পড়ে। সৈকতে ঘুরে বেড়ানো লাল কাঁকড়ার দলের অবাধ বিচরণও দেখার মতো।
কেওড়া, গরান, গেওয়া প্রভৃতি শ্বাসমূলীয় গাছ এ বনের প্রধান বৃক্ষ। এ ছাড়াও বনে রয়েছে হরিণ, বানর, বনবিড়াল, গুইসাপ, মেছোবাঘ, শজারু, শিয়াল, শূকর, নানা প্রজাতির সরীসৃপসহ প্রায় ২০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। বনে আছে অন্তত ৩৫ প্রজাতির পাখিসহ বিচিত্র প্রাণী। বনের সৌন্দর্যকে আরও আকর্ষণীয় করেছে লালদিয়া, বিহঙ্গ দ্বীপ ও দ্বীপের সৈকত। বনের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলেছে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০-১২টি প্রবহমান খাল। বনের দক্ষিণ সীমানায় সাগর মোহনার চরে আছে মৌসুমি শুঁটকিপল্লি।
বনের ভেতর আছে ঝুলন্ত রাস্তা। প্রতিদিন বনে ঘুরতে আসে মানুষ। রাস্তার দুই পাশের সবুজ প্রকৃতি আপনাকে মোহনীয় আবেশে ভাসাবে। হরিণঘাটায় পাঁচতলা সমান উঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। যেখানে বসে বনে বিচরণ করা প্রাণীর দেখা যাবে। আকর্ষণীয় জীবজন্তু এবং বনের গভীরতা উপলব্ধি করা যাবে। বনের মধ্যে আছে একটি দিঘি, যার ঘাটের মনোরম পরিবেশে বসার সুব্যবস্থা আছে। পশুপাখি দিঘি থেকে পানি পান করে। পর্যটকরাও ইচ্ছা করলে দিঘির সুপেয় পানি পান করতে পারেন।
এ বনে পিকনিক স্পটও আছে। দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে আসেন। প্রতিদিন শত শত স্কুল-কলেজ থেকে বাস, অটো, প্রাইভেটকার, টমটম ও মোটরসাইকেলে শিক্ষার্থী আসেন। সমুদ্রের কোলঘেঁষা বিশাল ঝাউবন পর্যটকদের আকর্ষণের প্রধান স্পট। সেই ঝাউবনে শুয়ে-বসে প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। চাইলে জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন। জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে ফ্রাই করে খেতে পারবেন।
হরিণঘাটা থেকে লালদিয়ার চরেও যেতে পারবেন। স্পিডবোট বা ট্রলারে গেলে মাত্র ২৫ মিনিটের মতো সময় লাগবে। সেখানে দেখতে পাবেন বিশাল চর। জেলেদের মাছ ধরা দেখা যাবে। শুঁটকি করার প্রক্রিয়াও চোখে পড়বে। পর্যটকরা এখানে এসে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলেন।
যেভাবে যাবেন :ঢাকা থেকে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন হরিণঘাটা। ঢাকার প্রধান দুই বাস টার্মিনাল সায়েদাবাদ ও গাবতলী থেকে সরাসরি বাসে পাথরঘাটায় পৌঁছানো যায়। ঝামেলাহীন ও শান্তিময় যাত্রার জন্য নৌপথে লঞ্চে যেতে পারেন। লঞ্চে যেতে হলে সদরঘাট থেকে সরাসরি বরগুনার লঞ্চে উঠতে হবে। ১১-১২ ঘণ্টার লঞ্চ জার্নির পর কাকচিড়ায় গিয়ে নামতে হবে। কাকচিড়া থেকে মোটরবাইক অথবা মাহিন্দ্রতে আধা ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে পাথরঘাটায় যেতে হবে। পাথারঘাটায় নেমে টেম্পো, মাহিন্দ্র অথবা মোটরবাইকে যেতে হবে। ২৫-৩০ মিনিট পরই কাঙ্ক্ষিত জায়গার দেখা মিলবে।
খাবেন কোথায় :হরিণঘাটায় পর্যটন স্পটকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। মিনি চায়নিজ, ইলিশ, চিংড়ি ফ্রাইসহ হরেক রকম খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আছে এসব রেস্তোরাঁয়। এখানে অনেক কম দামে মিষ্টি পানির ডাব পাওয়া যাবে।
থাকার ব্যবস্থা :হরিণঘাটায় থাকার মতো ভালো ব্যবস্থা নেই। থাকতে হলে আপনাকে বরগুনা সদরে ফিরতে হবে। সদরে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউস আছে। সেখানে দর-দাম করে থাকার জায়গা নিশ্চিত করতে হবে।